ব্যবসায় ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণের জন্য, বাসা শিফটের সময় ইত্যাদি নানা প্রয়োজনীয় কাজে সঠিক যানবাহন ব্যবহার করা জরুরি। ক্ষেত্র বিশেষে আপনাকে নির্দিষ্ট যানবাহন ব্যবহার করতে হবে। নিজের প্রয়োজন, বাজেট এবং যানবাহনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যানবাহন নির্বাচন করতে হয়। বর্তমানে এসব নানা কাজে বিশেষ করে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে খোলা ট্রাক অনেক পরিচিত। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য ১ টন ক্ষমতার খোলা ট্রাকগুলো সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। এই আকারের ট্রাকগুলো পরিবহণ খরচ কমায় আর ব্যবসা লাভজনক করতে সাহায্য করে।
আজকের ব্লগে আমরা বাংলাদেশে সহজে পাওয়া যায় এবং পরিচিত এমন সেরা ১ টন খোলা ট্রাকগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
লজিস্টিক এবং পরিবহণ ব্যবসায় ১ টন খোলা ট্রাক হতে পারে একটি চমৎকার যানবাহন। এটি একাধারে একটি মাল্টিপারপাস যানবাহন এবং সে সাথে খরচও কম। এই ট্রাকগুলো ছোট ও মাঝারি ব্যবসা থেকে শুরু করে কৃষিক্ষেত্র, নির্মাণকাজ এবং ডেলিভারি ব্যবসার ক্ষেত্র পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পে নানাভাবে ব্যবহৃত হয়।
বড় ট্রাকের তুলনায় ১ টন খোলা ট্রাক তুলনামূলক কম খরচ। কেনার সময় যেমন খরচ কম লাগে, তেমনি এর অপারেটিং খরচও তুলনামূলক কম। ফলে এটি ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক। তাছাড়া, এই ট্রাকগুলো জ্বালানী সাশ্রয়ী, যা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী পরিবহণ খরচ বাঁচাতে সাহায্য করবে।
তাদের কমপ্যাক্ট আকার ব্যবহারের জন্য সুবিধাজনক। ফলে ১ টন খোলা ট্রাকগুলো সহজেই সরু রাস্তা ও বেশি ট্রাফিকের মাঝে চলাচল করতে পারে। বিশেষ করে, বাসা শিফটের জন্য ১ টন ট্রাক সবচেয়ে ভালো। একই সাথে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতায়াতের মাধ্যমে সেসব স্থানে পরিচালিত ব্যবসাকে সহজ করে তোলে। খোলা ট্রাক হওয়ায় সহজেই পণ্য লোড এবং আনলোড করা যায়।
আকারে ছোট হলেও, ১ টন ট্রাকগুলো যথেষ্ট পণ্য বহন করতে পারে। এর পে লোড ক্ষমতা ১,০০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত। ইট, বালি, তাজা পণ্য বা প্যাকেজ করা আইটেমগুলোর মতো পণ্য পরিবহণের জন্য এর একাধিক ভ্রমণের প্রয়োজন হয় না।
১ টন খোলা ট্রাকগুলো তাদের স্থায়িত্ব এবং সহজ মেকানিক্যাল সিস্টেমের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। ফলে এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম। এই যানবাহনের খুচরা যন্ত্রাংশ বেশিরভাগই সহজলভ্য এবং কম খরচের হয়, যা ডাউনটাইম এবং মেরামতের খরচ কমিয়ে দেয়।
হালকা লোডের জন্য ডিজাইন করা, ১-টন ট্রাকগুলো বড় আকারের যানবাহনের তুলনায় অত্যন্ত জ্বালানী-দক্ষ। ফলে এটি একটি টেকসই বিকল্প হতে পারে। বিশেষ করে স্বল্প থেকে মাঝারি দূরত্বে বারবার পরিবহণের প্রয়োজন হয় এমন ব্যবসার জন্য এটি বেশ উপযুক্ত।
বড় বাণিজ্যিক এবং ভারি যানবাহনের তুলনায় ১-টন ট্রাকগুলো চালানো অপেক্ষাকৃত সহজ। তাদের ছোট আকার এবং উন্নত সিস্টেম ড্রাইভারের উপর চাপ কমায়, বিশেষ করে ব্যস্ত বা সরু রাস্তা এবং দুর্গম স্থানে।
এর জ্বালানী দক্ষতা এবং বড় ট্রাকের তুলনায় ধোঁয়া কম নির্গমন হয়। তাই ১ টন খোলা ট্রাক একটি পরিবেশবান্ধব যানবাহন।
এসিআই মোটরস এর ফোটন সিরিজে রয়েছে বিভিন্ন রেঞ্জের পিকআপ ট্রাক। ১ টন থেকে ৩ টন পর্যন্ত তাদের ট্রাক রয়েছে। তাদের ১ টন টিএম পিকআপের রয়েছে বিশাল কার্গো স্পেস, পাওয়ার স্টিয়ারিং, রঙিন ডিজিটাল এলএসডি ড্যাশবোর্ড, মডার্ন কেবিন এবং মাল্টিমিডিয়া অডিয়োর ব্যবস্থা। এর পে লোড ক্ষমতা ১০০০ কেজি।
এরপর রয়েছে টাটা মোটরস। বহু বছর ধরে জনপ্রিয়তার সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে বাংলাদেশে। এর স্থায়িত্ব এবং দক্ষতা, সে সাথে চমৎকার ডিজাইন করা বিভিন্ন পিকআপ এবং ট্রাকের রেঞ্জ সবার জন্যই পছন্দের যানবাহন বাছাইয়ের সুযোগ রেখেছে।
টাটা মোটরস ইন্ট্রা ভি২০-র উদ্ভাবনী নতুন 'প্রিমিয়াম টাফ' ডিজাইন একে অন্য যানবাহন থেকে আলাদা করে। এর রয়েছে নতুন বিএসআইভি-কমপ্লায়েন্ট ডিআই (BSIV-compliant DI) ইঞ্জিন, যা ৪০০০rpm-এ ৭০hp শক্তি উৎপন্ন করে। এর ইঞ্জিন ওয়াটার কুলড ডিরেক্ট ইনজেকশন কমন রেল ডিজেল ইঞ্জিন। যার রয়েছে এক্সস্ট গ্যাস রিসার্কুলেশন এবং অক্সিডেশন ক্যাটালিস্টসহ টার্বো চার্জার এবং ইন্টারকুলারসহ অনবোর্ড ডায়াগনস্টিকস (OBD-II)।
এই কমপ্যাক্ট পিকআপ ট্রাকে একটি গিয়ার শিফট অ্যাডভাইজার (GSA) রয়েছে, যা সবচেয়ে উঁচুমানের জ্বালানি দক্ষতা এবং একটি মসৃণ ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে। এর হাইড্রোলিক পাওয়ার অ্যাসিস্টেড স্টিয়ারিং (HPAS) গাড়ির চালানো অনেক সহজ করে তোলে। এটি দীর্ঘ দূরত্বের ভ্রমণ এবং ভারী পণ্য পরিবহণের জন্য উপযুক্ত।
ইঞ্জিন ক্ষমতা: ১৩৯৬ সিসি
পে লোড ক্ষমতা: ১১০০ কেজি
টাটা মোটরস ইন্ট্রা ভি১০ তৈরি করা হয়েছে ছোট ও মাঝারি ব্যবসার মালিকদের জন্য। ইন্ট্রা রেঞ্জ টাটা মোটরসের নতুন 'প্রিমিয়াম টাফ' ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত যার লক্ষ্য দক্ষতা এবং নির্ভরযোগ্যতার সাথে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার উন্নতি করা।
এটি বিএসআইভি-কমপ্লায়েন্ট ডিআই (BSIV-compliant DI) ইঞ্জিন দ্বারা চালিত যা ৪০Hp এবং ৯৬Nm টর্ক প্রদান করে। এর ৪৩% গ্রেডেবিলিটি দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা বা ফ্লাইওভারে চলাচলে সাহায্য করে। এর ৪.৭৫m এর টার্নিং সার্কেল রেডিয়াস ব্যস্ত ট্র্যাফিকের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালানো সহজ করে।
ইঞ্জিন ক্ষমতা: ৮০০ সিসি
পে লোড ক্ষমতা: ১০০০ কেজি
জাপানের ইসুজু কোম্পানির ডি ম্যাক্স সিরিজের রেগুলার ক্যাব একটি পরিচিত এবং দক্ষ ট্রাক। এর রয়েছে ফ্ল্যাট ডেকের টার্বো চার্জড ডিরেক্ট ইনজেকশন ডিজেলের ইঞ্জিন। যা ৫৮/৭৮ (kW/hp) পাওয়ার এবং ১৭৬ Nm টর্ক প্রদান করে।
ইঞ্জিন ক্ষমতা: ২৪৯৯ সিসি
পে লোড ক্ষমতা: ১০৯০ কেজি
মাহিন্দ্রা ই-ম্যাক্স ট্রাক বাংলাদেশে জনপ্রিয় ১ টন খোলা ট্রাকের বাজারে একটি নতুন সংযোজন, যার ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনার পিকআপ সহজ এবং ব্যবসা লাভজনক করতে, এর আছে স্মার্ট আইম্যাক্স প্রযুক্তি। সরু রাস্তা বা দুর্গম অঞ্চলের জন্য এটি হতে পারে চমৎকার অপশন। এর রয়েছে এমটুডিআই (m2Di) ইঞ্জিন এবং ২০০ Nm টর্ক।
ইঞ্জিন ক্ষমতা: ২৫২৩ সিসি
পে লোড ক্ষমতা: ১৩০০-১৫০০ কেজি
নিসান নাভারা এর পিকআপ সিরিজের এমন একটি মডেল যা তার দক্ষতা ও কার্যকারিতার জন্য বিখ্যাত। এর ৩,৫০০ কেজি পর্যন্ত টোয়িং ক্যাপাসিটি রয়েছে। যেকোনো ধরনের রাস্তার জন্য এটি উপযুক্ত। এর ইএলএসডি প্রযুক্তি পাহাড়ের রাস্তায় চলার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এর পে লোড ক্ষমতা ১০০৪ কেজি।
১. বাজেট: আপনার কেনার ক্ষমতা অনুযায়ী কোম্পানি নির্বাচন করুন।
২. ব্র্যান্ড: জনপ্রিয় ও পরিচিত ব্র্যান্ড এবং ভালো ওয়ারেন্টি সুবিধা রয়েছে এমন কোম্পানি নির্বাচন করুন।
৩. জ্বালানি খরচ: কম জ্বালানি খরচের দিকে খেয়াল রাখুন।
৪. প্রয়োজন: পরিবহণযোগ্য পণ্যের ধরন এবং ওজন বিবেচনা করুন।
ট্রাকের রক্ষণাবেক্ষণ
১. নিয়মিত সার্ভিসিং
২. অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না।
৩. ভালো মানের জ্বালানি ব্যবহার করুন।
৪. ট্রাকের রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাগজ এবং ইনস্যুরেন্স আপডেটেড রাখুন।
১ টন খোলা ট্রাক ব্যবসায়িক কাজ এবং পণ্য পরিবহণের জন্য একটি উপযুক্ত যানবাহন। তবে, বাংলাদেশের বাজারের এতো ব্র্যান্ড এবং মডেলের মাঝে আপনার জন্য কোনটি দরকার, তা বেছে নেওয়া কষ্টসাধ্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে আজকের ব্লগ আপনার জন্য গাইড হতে পারে। আশা করি, আপনার বাজেট, প্রয়োজন এবং ট্রাকের কার্যকারিতা বিবেচনা করে আপনি সেরা ট্রাকটি বেছে নেবেন।
এছাড়াও পড়ুন নতুন ট্রাক কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন