বাসা বদল এমনিতেই কঠিন আর প্রচুর চাপের কাজ। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এটি একটি বিশৃঙ্খল অভিজ্ঞতাও হতে পারে। একইসাথে এই প্রক্রিয়া নানাভাবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পুরানো জিনিসপত্র এবং আসবাব ফেলে নতুন করে কেনা, ঠিক মতো আবর্জনা অপসারণ না করলে, ঘর পরিষ্কারের পণ্য, পরিবেশবান্ধব জিনিস ব্যবহার না করা, রিসাইকেলিং না করা, পরিবহণের জ্বালানি ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হয়। বাসা পরিবর্তনের সময় প্রচুর আবর্জনা ফেলার প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে আনপ্যাক করার সময়।
তবে একটু চেষ্টা করলেই আমরা এসব এড়াতে পারি। আমাদের পরিবেশের যত্ন আমাদেরই করতে হবে। তাই সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে, আপনার হোম শিফটিং প্রক্রিয়াটিকে ইকো-ফ্রেন্ডলি বা পরিবেশবান্ধব করে তুলতে পারেন। এই আর্টিকেলে আমরা, কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি না করে বাসা বদল করা যায় তার ব্যবহারিক টিপস এবং কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রথমেই বাসা শিফটের প্রক্রিয়াটির একটা বিস্তারিত পরিকল্পনা করে ফেলুন। কী কী করতে হবে, কিনতে হবে, কাজের ডিটেইলস, তারিখ ও সময়সহ। এমনিতেও বাসা পরিবর্তনের সময় একটি প্ল্যান করে রাখা উচিত। এই প্ল্যান থেকে আপনি বুঝতে পারবেন, কোন কোন ক্ষেত্রকে আপনার পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। বাসার সবার কাছ থেকে আইডিয়া নিন, কাজ ভাগ করে দিন। কঠিন এই কাজকে আনন্দময় করে তুলুন।
বাড়ি বদলের সময় সবার আগে অপ্রয়োজনীয় জিনিস যতটা সম্ভব কমাতে হবে। এতে নতুন বাসায় বাড়তি জিনিসের ঝামেলা পোহাতে হবে না। হোম শিফটিংয়ের সময় পরিবেশগত প্রভাব কমানোরও সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে এটি একটি। আপনাকে যত কম প্যাক করতে হবে, প্রক্রিয়াটিতে তত কম খরচ হবে, কাজ সহজ হবে এবং পরিবহণের জন্য কম পেট্রোল লাগবে।
দান বা বিক্রি করুন: ভাল অবস্থায় থাকা জিনিসগুলো দাতব্য সংস্থানে দান করা যেতে পারে বা অনলাইনে বিক্রি করা যেতে পারে। চাইলে, পরিচিত কাউকেও দিয়ে দিতে পারেন।
রিসাইকেল: কাগজ, কাচ এবং প্লাস্টিক রিসাইকেল করা যেতে পারে। পুরানো আসবাব নতুন ডিজাইনে ব্যবহার করতে পারেন, অ্যান্টিক হিসাবে বানাতে পারেন।
দায়িত্বের সাথে জিনিস এবং আসবাবপত্র অপসারণ করুন: রং, ক্লিনার এবং রাসায়নিকের মতো বিপজ্জনক উপকরণ নিয়ম অনুযায়ী সঠিকভাবে অপসারণ করা উচিত। চাইলে, কোনো দোকান অথবা যারা এসব ব্যবহার করে তাদের দিয়ে দিতে পারেন
প্যাকিং উপকরণের পিছনে অর্থ যেমন খরচ হয়, তেমনি উপকরণগত বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিবেশেরও ক্ষতি হয়। বাবল র্যাপ এবং স্টাইরোফোমের মতো বহুল পরিচিত প্যাকিং উপকরণগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে। তাই পরিবেশবান্ধব বিকল্প বেছে নিন।
পুনরায় ব্যবহার: পুরানো বক্স, সংবাদপত্র এবং কম্বল প্যাক করার জন্য পুনরায় ব্যবহার করুন। পরিচিত কারো কাছ থেকে প্যাকিং বক্স নিতে পারেন। অথবা সেকেন্ড হ্যান্ড কিনতে পারেন। এই কাজটি সময়সাপেক্ষ, তাই আগে থেকেই বক্স সংগ্রহ করা শুরু করুন।
বায়োডিগ্রেডেবল বিকল্প: কর্নস্টার্চ বা রিসাইকেলের উপকরণ থেকে তৈরি যেমন চিনাবাদাম প্যাকিং বেছে নিন।
কাপড়ের মোড়ক: ভঙ্গুর জিনিসগুলোকে রক্ষা করতে প্লাস্টিকের বাবল র্যাপ দিয়ে মোড়ানোর পরিবর্তে কাপড় ব্যবহার করুন।
ওভারপ্যাকিং এড়িয়ে চলুন: প্রয়োজনীয় বক্সের সংখ্যা কমাতে দক্ষতার সাথে প্যাক করুন।
রান্নাঘরের জিনিস সবার শেষে প্যাক করুন।
বাসা শিফটের মাত্র কয়েক দিন আগে রান্নাঘরের জিনিস প্যাক করবেন। নয়তো টেকআউট, কাগজের প্লেট, কাপ এবং প্লাস্টিকের কাটলারি থেকে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য তৈরি হতে পারে। শেষ মিনিট পর্যন্ত রান্নাঘর প্যাক না করার চেষ্টা করুন, যাতে আপনি রান্না এবং খাওয়ার জন্য আপনার নিজের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারেন।
রান্নাঘর প্যাক করার সময়, আপনি যে খাবারের বর্জ্য তৈরি করছেন তা খেয়াল রাখবেন। চেষ্টা করবেন যাতে পচনশীল খাবার ফেলে দিতে না হয় অথবা নষ্ট না হয়। মুভার্স কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন, যাতে তারা আপনাকে খাবার পরিবহণে সাহায্য করে।
ট্রাক বুকিং করতেঃ লালামুভ অ্যাপে অর্ডার শিডিউল করবেন কিভাবে? অর্ডার শিডিউল করার ৫ টি সুবিধা
প্যাকিং এবং আনপ্যাকিং-এর সময়ের জন্য খাবার আগে থেকে প্রস্তুত করুন এবং ফ্রোজেন করে রাখুন। এটি কেবল আপনার সময় এবং অর্থই বাঁচাবে না, বরং আপনাকে চিন্তামুক্ত রাখবে এবং পরিবেশকেও বাঁচাবে।
ঠিকানা আপডেট এবং পেপারলেস প্রক্রিয়া
আপনার নতুন ঠিকানা আপডেট করে আপনার বন্ধুদের এবং বিভিন্ন সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। চেষ্টা করবেন, অনলাইনে এবং ইমেইলের মাধ্যমে কাজগুলো করার। এতে পেপারলেস প্রক্রিয়ায় কাগজের অপচয় রোধ হবে।
নতুন বাড়ি সাজাতে, যতটা পারেন সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস ব্যবহার করুন। পুরানো সবকিছু ফেলে নতুন জিনিস কেনা অর্থের অপচয়। একদম ব্যবহার অনুপযোগী না হলে, নতুন কেনার প্রয়োজন নেই। যদি কিনতেই হয়, বিভিন্ন রিসাইকেল, থ্রিফটিং শপ, সেকেন্ড হ্যান্ড দোকান, ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, বন্ধু এবং পরিবারের কাছ থেকে কিনতে পারেন। সেই সাথে, অপ্রয়োজনীয় আসবাব বাইরে ফেলে পরিবেশ দূষণ করবেন না। বিক্রি করে দিতে পারেন, দান করতে পারেন। আরেকটি মজার কাজ করতে পারেন, তা হলো আপসাইক্লিং বা নতুন করে ব্যবহার। যেমন, পুরানো কাচের বোতল থেকে একটি ল্যাম্পশেড তৈরি করতে পারেন, পুরানো মই একটি কোট স্ট্যান্ড হতে পারে ইত্যাদি।
আপনার জিনিসপত্র পরিবহণ কার্বন নির্গমনে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। যখনই সম্ভব ইকো-ফ্রেন্ডলি পরিবহন বিকল্পগুলো বেছে নিন।
হাঁটা বা বাইক: স্বল্প দূরত্বের জন্য, ছোট আইটেমসহ হাঁটা বা বাইক চালানোর কথা বিবেচনা করুন।
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট: সহজে মানানসই আইটেম পরিবহণ করতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন।
বৈদ্যুতিক বা হাইব্রিড যানবাহন: মুভিং কোম্পানির ট্রাক ভাড়া করার বদলে একটি বৈদ্যুতিক বা হাইব্রিড বিকল্প বেছে নিন।
ট্রিপ একত্র করুন: বারবার আসা যাওয়া সময় ও অর্থ ব্যয় করবে বেশি। প্রক্রিয়াটিকে আরও কঠিন করে তুলবে। তাই, চেষ্টা করবেন একটি বা দুটি ট্রিপেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন।
ইকো-ফ্রেন্ডলি মুভিং কোম্পানি: মুভিং কোম্পানি নির্বাচন করার সময়, তাদের পরিবেশগত দিক বিবেচনা করুন। পরিবেশবান্ধব সার্ভিস অফার করে যেমন রিসাইকেল উপকরণ এবং জ্বালানী-দক্ষ যানবাহন ব্যবহার করা ইত্যাদি; এমন সংস্থাগুলোর সন্ধান করুন।
পরিবেশের উপর প্রভাব কমাতে পরিবেশবান্ধব ক্লিনিং পণ্য ব্যবহার করুন।
প্রাকৃতিক ক্লিনার: ভিনেগার, বেকিং সোডা এবং লেবুর রস ব্যবহার করে নিজেই ক্লিনার তৈরি করে নিন।
কঠোর রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলুন: হালকা জাতীয় রাসায়নিক সামগ্রী আছে এমন পণ্যগুলো বেছে নিন।
আপনার নতুন বাড়িতে শক্তি দক্ষতা বা এনার্জি এফিসেন্স নতুন করে শুরু করার একটি সুযোগ। চেষ্টা করবেন পরিবেশবান্ধব হওয়ার, এতে আপনার অর্থও বাঁচবে।
শক্তি-দক্ষ যন্ত্রপাতি: পুরানোগুলো প্রতিস্থাপন করার সময় শক্তি-দক্ষ যন্ত্রপাতিগুলোতে আপগ্রেড করার কথা বিবেচনা করুন। এতে নতুন কিছু কিনতে হবে না।
আলো: শক্তি সঞ্চয়ের জন্য LED বাল্ব ব্যবহার করুন।
নবায়নযোগ্য শক্তি: জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে সৌর প্যানেল বা বায়ু শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করুন। শক্তি দক্ষতার উপর ভিত্তি করে আপনার নতুন বাড়িতে আসবাবপত্র এবং সাজসজ্জার ব্যবস্থা করুন। উদাহরণস্বরূপ, জানালার সামনে কিছু রাখবেন না এবং তাপ নির্গত হতে পারে এমন জিনিস যেমন বাতি বা টিভি থার্মোস্ট্যাটের কাছে রাখবেন না।
আপনার হোম শিফটিং প্রক্রিয়ার মধ্যে এই ইকো-ফ্রেন্ডলি পদ্ধতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করে, আপনার কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে পারবেন।
মনে রাখবেন, ছোট একটি কাজও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিবেশবান্ধব টিপসগুলো অনুসরণ করে, আপনি নতুন বাড়িতে যাওয়ার সময় পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন। আসুন একটি সবুজ ভবিষ্যত পৃথিবী তৈরি করতে সবাই একসাথে কাজ করি।