Bangladesh Blog (BN)

নতুন ট্রাক কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

Written by Lalamove Bangladesh | Jun 24, 2025 10:53:55 AM

পরিবহণ এবং প্রোডাক্ট ডেলিভারির ব্যবসার জন্য ট্রাক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক কথায় ট্রাক ছাড়া আপনার চলবে না। বিশেষ করে বাসা শিফট এবং পণ্য সরবরাহের জন্য কাস্টমার ট্রাকই বেছে নেয়। সেজন্য আপনাকে নিয়মিত ট্রাক ভাড়া করতে হবে অথবা কিনতে হবে। সময়মত এবং নিরাপদে কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন উন্নতমানের ট্রাক। তাই নতুন ট্রাক কেনার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। আজকের আর্টিকেলে, এমনি কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করবো। 

১. ট্রাকের ধরন   

ট্রাক কেনার আগে আপনার ঠিক করতে হবে ট্রাকটি কীসের জন্য ব্যবহার করবেন। আপনার কি ভারি কাজের জন্য ট্রাক লাগবে না কি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি ছোট পিকআপ? আপনার কি ঘন ঘন টোয়িং করা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে আপনার অপশনগুলো থেকে বাছাই করতে সাহায্য করবে, সময়ও বাঁচাবে।

২. বাজেট

অবশ্যই আপনার বাজেট ঠিক করতে হবে প্রথমে। বাজেট নির্ধারণ করে, এর মধ্যে ফিট করে এমন একটি ট্রাক খুঁজুন। তাহলে আপনার কাজ সহজ হবে। তবে, আপনি যত ভালো মানের ট্রাক চাইবেন, বাজেটও সে অনুসারে বাড়বে। 

৩. ব্র্যান্ড

ট্রাকের মতো এতবড় এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কেনার আগে অবশ্যই ব্র্যান্ড চেক করে নিবেন। ব্র্যান্ডের রিভিউ,  নির্ভরযোগ্যতাসহ ভালো পরিচিতি আছে কি না তা দেখতে হবে। সে সাথে আপনার ট্রাকের ওয়ারেন্টি, মেরামতের ব্যবস্থা আছে না কি  ইত্যাদিও দেখে নিতে হবে।  

৪. ট্রাকের মাপ ও রং

বাংলাদেশে বড় ট্রাক সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় আসে না। ১ বা দেড় টন মাপের গাড়িগুলো সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে আসে, তবে রাস্তায় চলার জন্য কিছু পরিবর্তন করে নিতে হয়। বড় ট্রাকের ক্ষেত্রে ইঞ্জিন ও চেসিস আমদানি করে, পরে বাকি কাজ শেষ করতে হয়। ট্রাকের বডি তৈরিতে সরকারের দেয়া কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। একটি ১৫ টন ট্রাক লম্বায় ২২ ফিট এবং পাশে ০৮ ফিটের বেশি হওয়া যাবে না। গাড়ির রং, ডকুমেন্টস করার সময় ঠিক করা হয়। কত ধরনের রং ব্যবহার করা যাবে তারও নিয়ম আছে। প্রাইভেট ও কমার্শিয়াল ট্রাকের রং ভিন্ন হয়। 

৫. ইঞ্জিন 

ট্রাক কেনার সময় এবং পরবর্তী যেকোনো ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় খরচ যায় মূলত ইঞ্জিনে। তাছাড়া, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এটি বড় ভূমিকা রাখে। ইঞ্জিনের যেকোনো সমস্যা তা যত ছোটোই হোক, সময়ের সাথে ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়েই তোলে। ট্রাক থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে কি না, ইঞ্জিনে ওয়েল লেভেল ঠিক আছে কি না তা দেখতে হবে। ধোঁয়ার রং সাদা হতে শুরু করলে, ইঞ্জিনের রিং-পিস্টন বদলাতে হবে। সে সাথে নিয়মিত ফিল্টার, লুব্রিকেন্ট, এয়ার ফিল্টার বদলাতে হবে।  

৬. টায়ার 

টায়ার কেনার সময় দোকান থেকে এর ওয়ারেন্টি, কত কিলোমিটার চলবে, গ্যারান্টি এসব জানা যায়। যদিও, এটি মূলত  নির্ভর করে রাস্তার অবস্থার উপর। বিশেষ করে, বাংলাদেশের রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে টায়ারের অবস্থা দ্রুতই খারাপ হয়ে যায়।  টায়ার ক্ষয়ে যাওয়ার পরও কিছুদিন ব্যবহার করতে চাইলে, টায়ারগুলো সামনে পিছনে ঘুরিয়ে লাগাতে পারেন। গরমের সময় দূরের যাত্রায়, অনেক সময় টায়ার গরম হয়ে ফেটে যায়। তাই যাত্রা শুরুর আগে টায়ার পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে পারেন। টায়ারে বাতাসের চাপ ঠিক আছে কি না বা টায়ারের কোথাও ফুলে উঠেছে কি না, টায়ারে পিন ঢুকেছে কি না ইত্যাদি খেয়াল রাখতে হবে। 

 

জেনে নিন ঢাকা শহরে পিকআপ/ট্রাক ভাড়ার তালিকা

 

৭. ধারণক্ষমতা   

প্রতিটি ট্রাক তার ধরন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভার বহন করতে পারে। এর বেশি হলে, ট্রাকের ক্ষতির সাথে সাথে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। সে সাথে টায়ার ক্ষয় হবে, ইঞ্জিনের ক্ষমতা কমবে ইত্যাদি। তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ধরনের এবং ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাক কিনতে হবে। এবং অতটুকু পণ্যই বহন করতে হবে। তাছাড়া, বিভিন্ন রাস্তা, ব্রিজেরও ধারণক্ষমতা নির্দিষ্ট করা আছে। তা মেনে চলতে হবে। 

৮. লাইটস 

যেকোনো যানবাহনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এর লাইটস। অনেক দুর্ঘটনা শুধু এই একটি দিক খেয়াল না রাখার কারণে হয়। বিশেষ করে রাতে অথবা শীতে কুয়াশার সময় পর্যাপ্ত আলো না থাকলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নিয়মিত হেডলাইট চেক করা, ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়্যারিং, লেন্স, উজ্জ্বলতা ইত্যাদি চেক করা এবং প্রয়োজনে বদলে ফেলা উচিত। আমাদের দেশে সাধারণত ফগ লাইটের ব্যবহার তেমন নেই। তবে, ফগ লাইট ব্যবহার করলে অনেক দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা যায়। তাছাড়া, পিছনের ট্রাক যাতে আপনার দিক বুঝতে পারে এজন্য টেল লাইট ঠিক আছে কি না তা খেয়াল রাখতে হবে। আর লাইট বদলানোর সময় জোড়া হিসাবে বদলানো উচিত।  

৯. ব্রেক  

সময় ও জায়গা বুঝে সঠিকভাবে ব্রেক করাটা দক্ষ ড্রাইভারের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একইসাথে ব্রেক সিস্টেম ঠিক আছে না কি তাও চেক করে নিতে হবে নিয়মিত। একেক ট্রাকের ব্রেকিং সিস্টেম একেক রকম। ব্রেকিং সিস্টেমের কিছু পার্টস যেমন ব্রেক প্যাড, বুশ, পিন ইত্যাদি নিয়মিত চেক করে পরিবর্তন করলে ব্রেকিং সিস্টেম ঠিক থাকে। সে সাথে নিয়মিত গ্রিজিং করতে হবে।   

১০. জ্বালানি দক্ষতা

জ্বালানি দক্ষতা ব্যক্তিগত ব্যবহার এবং কাজ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ ইঞ্জিন এবং হাইব্রিড বা ডিজেলের মডেলগুলো দেখতে পারেন। জ্বালানির টাইপ চেক করুন, সম্ভব হলে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের চেষ্টা করুন। খরচ বাঁচানোর জন্য, নিরাপত্তার সাথে আপোষ করা চলবে না।   

১১. টোয়িং ক্ষমতা

আপনার যদি ট্রাকটি টোয়িংয়ের জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা থাকে, তবে এর টোয়িং ক্ষমতা পরীক্ষা করুন। টোয়িং ক্ষমতা ট্রেলারের ওজন নির্ধারণ করবে যাতে আপনি নিরাপদে টো করতে পারেন।  

১২. ট্রাক ড্রাইভার

আপনার ব্যবসার অনেক কিছুই নির্ভর করবে আপনার কর্মীর উপর। তাছাড়া জানমালের নিরাপত্তা এবং আর্থিক ক্ষতির বিষয়ও আছে। তাই সময় নিয়ে, বুঝে ট্রাক ড্রাইভার নির্বাচন করতে হবে। ড্রাইভারের অভিজ্ঞতা, কোনো ধরনের আইনি জটিলতা আছে কি না সবকিছু দেখে নিতে হবে। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স আসল কি না, ট্রাফিক আইন জানে না কি, ট্রাক সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে না কি ইত্যাদিও দেখে নিতে হবে। 

১৩.প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস 

রাস্তায় যেকোনো পরিবহণ আইন মেনে চলতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস সবসময় সাথে থাকতে হয়। যেমন-
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- রুট পারমিট
- ফিটনেস সার্টিফিকেট
- রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
- মটর ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট
- ট্যাক্স টোকেন

প্রতিটি ডকুমেন্টের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে, তাই সময়মতো রিনিউ করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট ও ফিটনেসের জন্য স্থানীয় বিআরটিএ অফিসে যেতে হবে। মটর ইন্সুরেন্সের জন্য এই কাজ করে এমন কোনো কোম্পানিতে যেতে হবে। সাথে নিয়ে যাবেন এমন কোনো সার্টিফিকেট যেখানে ট্রাকের ইঞ্জিন নাম্বার এবং চেসিস নাম্বার লেখা থাকবে, যেমন ফিটনেস সার্টিফিকেট অথবা ট্যাক্স টোকেন। খরচ নির্ভর করবে আপনার মটর ইন্সুরেন্সের ধরনের উপর। নির্দিষ্ট ব্যাংকে সরকার থেকে নির্ধারিত টাকা জমা দিলে ট্যাক্স টোকেন পাবেন। সঠিক এবং আপডেটেড ডকুমেন্টস ছাড়া ট্রাক চললে, আপনার জরিমানা এমনকি জেলও হতে পারে। তাই এসবের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।  

১৪. ট্রাকের নিরাপত্তা   

ট্রাকের নিরাপত্তার স্বার্থে জিপিএস সিস্টেম ইন্সটল করে নিতে পারেন। তাহলে ট্রাকের অবস্থান, ট্রাক চালক কোথায় আছে, জ্বালানির পরিমাণ, পণ্যের পরিমাণ ইত্যাদি সব জানতে পারবেন। ফলে, ব্যবসায় সুবিধা হবে, ভুল বোঝাবোঝি হবে না। কোথাও ট্রাক অনেকক্ষণ আটকে থাকলেও, আপনি সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। তাছাড়া, সময়ের সাথে অনেক ধরনের আধুনিক ফিচার যোগ হচ্ছে। সম্ভব হলে, তাও যুক্ত করতে পারেন। 

সময়ের সাথে সব বদলে যাচ্ছে। বিশেষ করে, ব্যবসা এবং কাজের ক্ষেত্র। সব কিছুতে প্রযুক্তির স্পর্শ, ডিজিটাল সিস্টেম যুক্ত হচ্ছে। তাই আপনারও উচিত হবে সময়ের সাথে তাল মেলানো। পরিবহণ ব্যবসায় সঠিক যানবাহন বিশেষ করে ট্রাক কেনা খুব জরুরি। তবে, এতে চিন্তার কিছু নেই। আশা করি আমাদের পরামর্শ মেনে চললে আপনার কাজ সহজ হয়ে যাবে।