অনলাইন ব্যবসায় সফল হওয়ার ৬টি সহজ উপায়

নাদিয়া ছোটবেলা থেকেই পেইন্টিং-এ খুব আগ্রহী। শাড়িতে হ্যান্ড পেইন্ট করে ডিজাইন করা ওর খুব পছন্দের কাজ। কত শাড়িতে সে কাজ করেছে, আঁচল রাঙিয়ে দিয়েছে ময়ূর, পাহাড়, নকশা কত কিছু দিয়ে! একদিন মায়ের একটা শাড়ি এমন পেইন্ট করে ছবিটা ফেসবুকে আপলোড করে খেয়ালে। তার পর থেকেই যেন ম্যাজিক! কত মানুষ তাকে পার্সোনালি জিজ্ঞেস করেছে, শাড়িটা কীভাবে করেছেন? কেনা নাকি নিজের করা? আমার শাড়িটা এমন করে দিতে পারবেন? আপনি একটা দোকান দিয়ে শুরু করুন!
সেই থেকে শুরু। নাদিয়া এরপর ‘বাহারি শাড়ি’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ শুরু করে। সেখানে সে অর্ডার নিয়ে শাড়িতে পেইন্ট করবে ভাবে। প্রথম মাসে মাত্র ৩ টি শাড়ির অর্ডার পায় সে। এরপর থেকে তার পেইন্টিং যেন আস্তে আস্তে বেড়েছেই। নাদিয়ার ‘বাহারি শাড়ি’র এখন আলাদা ওয়েবসাইট আছে, সেখানে হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করে ৮ জন। প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ শাড়ির কাজ করে তারা!
এই গল্পটা নাদিয়ার একার নয়। নাদিয়ার মতো আরো অসংখ্য মানুষ আছেন, যারা অনলাইনে ছোট্ট ব্যবসা শুরু করে আজ দারুণ সফল। ইন্টারনেটের এই যুগে এসে আপনারও মনে হতে পারে নিজের একটা অনলাইন ব্যবসার কথা। শুরু করার প্ল্যান যদি করেন, শুরু তো করতেই পারেন। কিন্তু ঝাঁপ দেয়ার আগে অবশ্যই মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলো।
১। কীসের ব্যবসা করবো?
যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা জরুরি। পরিকল্পনা সঠিক মানে ব্যবসা আগাবে সঠিক পথে। আপনি কী বিক্রি করতে চান, সেটা কোথা সংগ্রহ করবেন, কতদিন সেটা চালিয়ে যেতে পারবেন, সবই নির্ভর করবে পরিকল্পনার উপর। পরবর্তী ধাপগুলো কী হবে, সেগুলোও পরিকল্পনা করতে হবে। হুট করে যদি কোনো ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন চলে আসে, সেটা মোকাবেলা করবেন কীভাবে, সেটাও কিন্তু আপনার পরিকল্পনার অংশ।
তাই যেকোনো ব্যবসা শুরুর আগেই প্রথম কাজ হচ্ছে পরিকল্পনা। কী করতে চান, কীভাবে করতে চান।
২। নতুনত্ব আছে তো?
বাজারে যা অলরেডি আছে, সেটাই যদি আবার আপনি শুরু করেন, সেটা নিছক একটা ব্যবসাই হবে, সফল কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। অর্থাৎ আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে, কীভাবে নতুন কিছু আনতে পারেন আপনি। পণ্য যদি একও হয়, তবুও সেই পণ্যের মাঝে নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে আপনাকে। গ্রাহক এই প্রতিযোগিতার বাজারে সবসময় নতুন কিছুই খোঁজে। গ্রাহককে নতুন কিছু দিতে না পারলে গ্রাহক আগ্রহী হবে না আপনার সেবায়। নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে আপনার সার্ভিসে, নামে, লোগোতে, এমনকি বিজ্ঞাপনেও। যত বেশি নতুনত্ব আসবে, গ্রাহক তত বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে আপনার সার্ভিসে। আপনার অনলাইন ব্যবসার সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে ততই। যখন আপনার পণ্যের জন্য ওয়েবসাইট বানাবেন, সে ওয়েবসাইটেও যেন নতুনত্ব থাকে, কোনো ওয়েবসাইটের কপি যেন সেটা না হয়। যত জায়গা সম্ভব, সকল ক্ষেত্রে নতুনত্ব নিয়ে আসুন, নতুন কিছু দিয়েই চমকে দিন সবাইকে।
৩। ব্যবসাটা করবো কোথায়?
আগে আমরা দেখতাম, লাইব্রেরি এলাকায় সব বইয়ের দোকানই থাকে। বাজার এলাকায় থাকে চাল-ডালের দোকান। ক্রেতা জানতো, কী কেনার জন্য কোথায় যেতে হবে। এখন তো ব্যবসাটা হচ্ছে ইন্টারনেটে, কিন্তু এখনো সমানভাবেই জরুরি ব্যবসাটা হবে কোথায় তা খুঁজে বের করা। আপনি অনলাইন ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই এটা মাথায় রাখবেন, আপনি অনলাইন ব্যবসা কি ফেসবুকে করবেন, নাকি আলাদা ওয়েবসাইটে গিয়ে করবেন, নাকি নিজে প্রোডাক্ট বানিয়ে অন্যান্য বড় অনলাইন মাধ্যমে দিবেন? এই প্ল্যাটফর্ম নির্ভর করবে আপনার প্রোডাক্ট, সার্ভিসের ধরন আর টার্গেটেড কাস্টমারের উপর।
৪। ঠিকঠাক ডেলিভারি সার্ভিস কিন্তু চাই-ই চাই!
অনলাইন ব্যবসা মানেই পণ্য গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। আপনার পণ্য বা সার্ভিস যতই ভালো হোক না কেন, গ্রাহক হাতে ডেলিভারি ঠিকমতো না পেলে গ্রাহক কখনোই সন্তুষ্ট হবে না। গ্রাহককে সন্তুষ্ট রাখতে আপনার চাই দ্রুত, নিরাপদ ডেলিভারি সার্ভিস। যে ডেলিভারি সার্ভিস আপনার গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছে দিবে সঠিক সময়ে, আবার আপনি নিজেও ডেলিভারি ট্র্যাকিং করতে পারবেন, দ্রুত ডেলিভারি দিতে পারবেন; সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বাস করতে পারবেন। অনলাইন ব্যবসার সফলতার ম্যাজিক কিন্তু এখানেই, ভালো ডেলিভারি, ভালো নাম। এজন্য আস্থা রাখতে পারেন দেশের অন ডিমান্ড ডেলিভারি সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম Lalamove –এ। এখানে দ্রুত ও নিরাপদ ডেলিভারির পাশাপাশি পাবেন মাল্টি স্টপ ডেলিভারি, কাস্টমার কেয়ার, রিয়েল টাইম ট্র্যাকিংসহ নানান সুবিধা, যা বদলে দেবে আপনার ডেলিভারি সার্ভিসের অভিজ্ঞতা।
৫। মূলমন্ত্র একটাইঃ গ্রাহকই সব
আগের দিনে আমাদের এলাকায় একটা কথা ছিল, কাস্টমার হচ্ছে সব। কখনই একজন বিক্রেতা একজন কাস্টমারের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না। কাস্টমারের প্রয়োজনটাই দেখবে সবার আগে। এটা কিন্তু ব্যবসায় ভালো করার জন্য একদম দারুণ একটা অস্ত্র। আপনার কাজ যেহেতু কাস্টমারের সাথে, তাদের কথাই তো ভাবতে হবে সবার আগে। তাই আপনার যে ব্যবসাই হোক না কেন, দারুণ একটি কাস্টমার কেয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন কাস্টমার ভালো সেবা পেলে সে বারবার আপনার কাছে আসবে, অন্যদের বলবে আপনার সার্ভিস নিতে। এভাবেই আপনার অনলাইন ব্যবসা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে সফল হওয়ার পথে।
৬। প্রতিনিয়ত আপডেট আছি তো?
যুগ বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। প্রতিদিন আপনাকেও বদলে যেতে হবে। আজকের ফেসবুকে আপডেট এসে নিত্য নতুন সার্ভিস যোগ হচ্ছে প্রতিদিন। নিয়মিত প্রযুক্তির সাথে আপডেটেড থেকে নিজের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে হবে। কোথায় কী ঘটছে, সে সম্পর্কে আইডিয়া রাখাটাও জরুরি। আপনার ব্যবসার নতুন কোনো প্রতিযোগী বাজারে এসেছে কি না, তারা কী করছে, এসব নিয়েও খোঁজ রাখাটা দরকার। তবেই আপনি আপনার চারিপাশ সম্পর্কে সবসময় খোঁজ রাখতে পারবেন, ফলে সফল হওয়ার পথেও এগিয়ে থাকবেন।
শেষ কথা
সত্যি কথা বলতে, সফলতার একটাই সূত্র- পরিশ্রম। আরও সুন্দর করে বললে- বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রম। আপনি পরিশ্রমে ও সততায় এগিয়ে যান, সাফল্য একটি ফলাফল মাত্র।
এমন কিছুই করুন, যা কেউ করেনি আগে। দেখিয়ে দিন এমন কিছু, যা কেউ দেখেনি আগে।
আরও পড়ুন বাংলাদেশে হোম ডেলিভারি কুরিয়ার সার্ভিস: ই-কমার্স ব্যবসার জন্য গাইড