উদ্যোক্তাদের বিজনেস রেজিস্ট্রেশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

featured image

নতুন উদ্যোক্তাদের শুরুটা সবসময়ই থাকে চ্যালেঞ্জিং। নতুন ব্যবসা শুরু করা চাট্টিখানি কথা না। ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে একে বাস্তবে রূপ দিতে, পারি দিতে হয় লম্বা পথ। এর মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিজনেস রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিশ্চিত করা। অনেক সময় উদ্যোক্তারা এসব বিষয়ে খেয়াল রাখেন না। 

বিশেষ করে, অনলাইনে বিজনেসের ক্ষেত্রে অনেকেই এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন না। কিন্তু আপনার ব্যবসার নিরাপত্তা এবং আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে, আপনাকে এই কাজগুলো করতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরু করতে কী কী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে এবং কীভাবে সহজে এই কাজগুলো সম্পন্ন করা যায়। 

প্রথমেই দেখতে হবে আপনার কোম্পানি বা বিজনেস কোন ধরনের। সে অনুযায়ী কাগজপত্র নির্ধারণ করতে হবে। সাথে কোম্পানির নামেরও পরিবর্তন হবে। যেমন, কোম্পানি পাবলিক হলে নামের শেষে থাকবে পিএলসি, প্রাইভেট হলে লিমিটেড এবং পার্টনারশিপ থাকলে হবে মের্সাস। কোম্পানি একজন ব্যক্তির হলে, সেক্ষেত্রে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ। যাতে, নতুন উদ্যোক্তারা সহজে নিজেদের কাজের মাধ্যমে, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে। 

 

কোম্পানির নামের ছাড়পত্র 

প্রথম ধাপ হলো, আপনার কোম্পানি বা বিজনেসের জন্য একটি নতুন নাম ঠিক করা। নাম ঠিক করে তা যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সার্চ দিয়ে দেখতে হবে, এই নামে অন্য কোনো কোম্পানি আছে কি না। তারপর তাদের ওয়েবসাইটে আপনার একটি অ্যাকাউন্ট করে আবেদন করতে হবে। প্রাইভেট ও পাবলিক কোম্পানির জন্য প্রতিটি নামের জন্য ৫০০ টাকা এবং পার্টনারশিপ এর ক্ষেত্রে প্রতিটি নামের জন্য ৫০০ টাকা খরচ হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে, নামের ছাড়পত্র পাবেন।

 

কোম্পানির নিবন্ধন 

প্রথমেই লাগবে মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন। এই কাগজের মাধ্যমেই কোম্পানির বিভিন্ন কাজ পরিচালনা হয়। এখানে কোম্পানির নাম ও গঠন, উদ্দেশ্য, মূলধন, বিজনেসের ধরন, ঠিকানা, কাজের পরিধি ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। এটি আপনার ব্যবসাকে নিরাপত্তা দিবে, যাতে আপনার পার্টনার নিয়মের বাইরে কিছু করতে না পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে কর্তব্যরত রেজিস্টার, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নিবন্ধন করে প্রত্যয়নপত্র জমা দিবেন। এই সময়ের মাঝে না হলে, মেয়াদের ১০ দিনের মধ্যে কোম্পানিকে কারণ জানাতে হবে।  

এছাড়া সাথে থাকতে হবে-

- পরিচালকদের দায়িত্ব পালন করার স্বীকৃতিপত্র ও শেয়ার কেনার অঙ্গীকারপত্র। 

- মূলধনের বিবৃতিপত্র

- একজন আইনজীবীর বক্তব্য যেখানে লেখা থাকবে, কোম্পানি আইনের সকল শর্ত পালন করেছে 

- নাম ছাড়পত্র সনদ

- প্রয়োজনীয় ফি 

এছাড়াও আরও কিছু কাগজপত্র ও তথ্য লাগবে।

  • পরিচালকদের বিবরণ যেমন নাম, পিতা -মাতার নাম, পাসপোর্ট নম্বর, ইমেল আইডি, মোবাইল নম্বর
  • চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নাম
  • সকল শেয়ার হোল্ডার এবং পরিচালকগণের এনআইডি (জাতীয় পরিচয় পত্র), টি.আই. এন (TIN) এবং ১ কপি ছবি 

ট্রেড লাইসেন্স 

ব্যবসা করার অনুমতি হলো ট্রেড লাইসেন্স। এটি সরকার বা সরকারি সংস্থা কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে। এটি আপনার ব্যবসার বৈধতার একটি প্রমাণ। এটি আপনাকে আইনি জটিলতা থেকে বাঁচায়, ব্যাংক লোন নেওয়ার জন্য যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগে সেটার জন্যও ট্রেড লাইসেন্স দরকার। ব্যবসার কোনো চুক্তি, ব্যবসায়িক এসোসিয়েশনের সদস্য হতে এটি প্রয়োজন। নির্দিষ্ট আবেদন ও ব্যবসার ধরনের ভিত্তিতে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা এবং জেলা পরিষদ থেকে নির্দিষ্ট ফি আর কাগজপত্র জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়।  

(ক) ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থান, হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ, প্রতিষ্ঠান ভাড়া হলে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্র, আবেদনকারীর তিন কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।

(খ) পার্টনারশিপের ব্যবসা হলে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে পার্টনারশিপের অঙ্গীকারনামা, অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, পার্টনারদের তিন কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র

(গ) ফ্যাক্টরি হলে 

- পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের  ছাড়পত্র

- লোকেশন ম্যাপ

- মালিকের অনাপত্তিনামা

-লিমিটেড কোম্পানির জন্য কোম্পানির মেমোরেন্ডাম

-ক্লিনিক বা প্রাইভেট হাসপাতালের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র

- প্রিন্টিং প্রেস বা আবাসিক হোটেলের জন্য ডেপুটি কমিশনারের অনুমতিপত্র

- ঔষধ বা মাদক দ্রব্যের জন্য ড্রাগ লাইসেন্স

- অস্ত্র বা গোলাবারুদের ক্ষেত্রে অস্ত্র লাইসেন্স

- রিক্রুটিং এজেন্সি হলে মানব সম্পদ রপ্তানি ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স

- ট্রাভেলিং এজেন্সির হলে সিভিল এভিয়েশনের প্রদানের অনুমতিপত্র

       

এই পুরো প্রক্রিয়ায় খরচ হতে পারে ১-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এক নামে একাধিক ব্যবসা থাকলে খরচ আরও বাড়বে। তবে কোম্পানি হলে সকল ধরনের ব্যবসা এক লাইসেন্স দিয়ে করে খরচ কমানো যাবে। এছাড়া সাইনবোর্ড ফি, লাইসেন্স বই ও সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। আরও আছে উৎসকর, যেটি সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে ৩,০০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার জন্য কিছুটা কম। ফি ব্যাংকে জমা দিতে হবে এবং ৫-৭ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করতে হবে। 

নতুন বিজনেস শুরু করা কঠিন। অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। এর মাঝে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক রাখা অন্যতম ধাপ। উদ্যোক্তারা প্রথমে ঠিক মতো না জানার জন্য, ভুল করে ফেলে। কিন্তু, ছোট ভুলে বড় সমস্যা হয়ে যায়। আশা করি, আমাদের ব্লগটি আপনাকে বিজনেস রেজিস্ট্রেশনে সাহায্য করবে।   

Read more