ঘরের সাজে রেট্রো ও ভিনটেজ স্টাইল

featured image

ঘরের সাজে থিম নির্ভর সাজ সময়ের সাথে জনপ্রিয় হচ্ছে। নস্টালজিয়া হোক কিংবা ট্রেন্ড ফলো করার জন্য হোক, ইন্টেরিয়র ডিজাইনে রেট্রো ও ভিনটেজ স্টাইলের কথা বারবারই উঠে আসছে। চিরাচরিত ঘরের সাজে নতুনত্ব আনতে, রেট্রো বা ভিনটেজ স্টাইল হতে পারে দারুণ পছন্দ। কিন্তু রেট্রো আর ভিনটেজ কী এক? উত্তর পাবেন আজকের ব্লগে। সে সাথে কীভাবে নিজের স্টাইল বেছে নিবেন এবং ঘর সাজাবেন, তাও জানতে পারবেন আজকের লেখায়। 

রেট্রো স্টাইল কী?

‘রেট্রো’ শব্দটি এসেছে ‘retrospective’ থেকে, যার অর্থ অতীতের দিকে ফিরে তাকানো। রেট্রো স্টাইল মূলত ১৯৫০ থেকে ১৯৮০ দশকের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়া ডিজাইন ও রঙের ব্যবহারকে বোঝায়। রেট্রো ইন্টেরিয়র ডিজাইন অতীতের সেরাটা ফিরিয়ে আনে, ক্লাসিক আকর্ষণের সাথে সমসাময়িক ডিজাইন মিশিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু তৈরি করে। এই স্টাইলটি একাধিক যুগ থেকে অনুপ্রেরণা নেয়। যেমন মধ্য-শতাব্দীর আধুনিকতা এবং মিনিমাল ডিজাইন, ষাটের দশকের প্রাণবন্ত ভাব এবং ৭০-এর দশকের সাহসিকতাপূর্ণ ডিজাইন। 

ভিনটেজ স্টাইল কী?

ভিনটেজ স্টাইলের সময় হলো ২০ বছর বা তারও আগের স্টাইলের আসবাব এবং ডিজাইন। এটি সময়ের সাথে আরও গ্রহণযোগ্য এবং পছন্দের হয়ে উঠেছে। ভিনটেজ স্টাইলের আরামদায়ক আর ঐতিহ্যের আবহ আপনার ঘরকে দিবে পুরানো সময়ের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়া। 

ঘরের সাজে রেট্রো ও ভিনটেজ স্টাইলের ছোঁয়া 

১. রংয়ের ব্যবহার

ঘরের সাজে রেট্রো ও ভিনটেজ স্টাইল আনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো রংয়ের ব্যবহার। স্টাইল বুঝে আসবাবপত্র এবং ঘরের ডিজাইনে রং ব্যবহারে, সহজেই কাঙ্ক্ষিত স্টাইল ধরা দেয়। রেট্রো স্টাইলে সাধারণত উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয় যেমন কমলা, হলুদ, জলপাই সবুজ, টারকোয়িজ ইত্যাদি। ১৯৮০-এর দশকে নিয়ন গোলাপি, ইলেকট্রিক নীল এবং উজ্জ্বল হলুদ রঙের মতো গাঢ় রং ব্যবহার করা হতো। 

অন্যদিকে, ভিনটেজ স্টাইলে একটু নরম ও মিউট রং ব্যবহার করা হয়, যেমন প্যাস্টেল, গোলাপি, ফ্যাকাশে নীল, মেরুন, হালকা ধূসর ইত্যাদি। আপনার ড্রয়িংরুম বা বেডরুমের এক দেয়ালে রেট্রো প্রিন্ট ওয়ালপেপার ব্যবহার করতে পারেন। ভিনটেজ স্টাইল আনতে দেয়ালের রঙে মিউট রং ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে হালকা রংয়ের পর্দা বেছে নিতে পারেন। 

২. আসবাবপত্র

রেট্রো স্টাইলের আসবাবপত্র সাধারণত সোজা, তীক্ষ্ণ রেখাযুক্ত এবং কখনও কখনও প্লাস্টিক বা মেটালের হয়। ৭০-৮০ দশকের সোফা সেট, ভিন্ন কাঠের শোকেস বা গোল টেবিল এই স্টাইলের জন্য আদর্শ। স্লিক ইমস চেয়ার সাথে ম্যাচিং অটোম্যান ঘরে নিয়ে আসবে ৫০ এর দশকের ছোঁয়া।

ভিনটেজ আসবাবপত্র বেশিরভাগই কাঠের তৈরি, হালকা থেকে ভারি কারুকাজযুক্ত, সাথে প্রাচীন নকশার জিনিস যেমন হ্যান্ডপেইন্ট ড্রয়ার, ফোল্ডিং চেয়ার ইত্যাদি। যদি আপনার ঘরে পুরোনো আসবাব থাকে, ফেলে না দিয়ে তা রিফিনিশ করে ব্যবহার করুন। 

কাঠের পুরোনো চেয়ার একটু পালিশ বা রং করলেই হয়ে উঠতে পারে রেট্রো বা ভিনটেজ ঘরের মূল আকর্ষণ। এমন আসবাবপত্র খুঁজুন যা একটু নিচু আর ফ্লোরের কাছাকাছি। যেমন একটি নিচুঢালা সোফা বা আর্মচেয়ার, অথবা বিনব্যাগ লাউঞ্জার সহজেই আমাদের ৭০-এর দশকের আবহ দিবে। 

৩. আলো ও ল্যাম্পশেড

সঠিক আলোর ব্যবহার ঘরের সাজে দারুণ পরিবর্তন আনতে পারে। যেমন, ভিনটেজ স্টাইলের জন্য চাইনিজ কাগজের ল্যাম্প, পুরানো ঝাড়বাতি বা ব্রাস ফিনিশ ল্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন । রেট্রো স্টাইলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন রঙিন গ্লোব লাইট বা ১৯৭০ দশকের ঝকঝকে রঙের টেবিল ল্যাম্প।

৪. আর্টপিস ও সাজসজ্জার উপাদান

দেয়ালে রেট্রো সিনেমার পোস্টার, পুরোনো গানের ক্যাসেট বা রেকর্ড ডিস্ক সাজিয়ে রাখতে পারেন। আবার, ভিনটেজ ফিল পেতে পারেন পুরানো স্টাইলের ঘড়ি, পেইন্টিং, রেট্রো ফ্রেমে পারিবারিক ছবি বা টাইপরাইটার জাতীয় অ্যান্টিক পিস ব্যবহার করে। 

এছাড়াও পড়ুন ছোট রুম সাজানোর স্মার্ট টিপস: সীমিত জায়গায় অসীম সম্ভাবনা

ষাটের দশকের ভিনটেজ স্টাইলের গৃহসজ্জায় প্রচুর পরিমাণে গাছপালা ব্যবহার করা হতো। আপনার ঘরের বিভিন্ন কোণে বিভিন্ন আকারের গাছপালা যুক্ত করে সেই সময়কে ফিরিয়ে আনতে পারেন। পলিশড মেটালের আসবাবের সাথে কাঠের আসবাব অথবা বোনা কাপড়কে মসৃণ চামড়ার সাথে যুক্ত করুন। এই মিশ্রণটি আপনার নকশায় ভিনটেজ এবং আধুনিক উপাদানের মধ্যে বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে, ঘরের সাজে ভিন্নতা আনবে।  

৫. কাপড় ও টেক্সটাইল

রেট্রো স্টাইলে চমৎকার সব জ্যামিতিক প্রিন্ট, ফ্লোরাল ডিজাইন কিংবা মেটালিক ফিনিশ কাপড় ব্যবহার করা হয়। ভিনটেজের ক্ষেত্রে সুতির তৈরি হ্যান্ড এমব্রয়ডার্ড কুশন কাভার, টেবিল রানার বা লেস দেওয়া পর্দা ঘরে এক ধরনের আরামদায়ক উষ্ণতা এনে দেয়।

৭০-এর দশকে শ্যাগ কার্পেট ছিল সর্বত্র জনপ্রিয়। তবে, আজকের রেট্রো-স্টাইলের জন্য একটি সম্পূর্ণ কার্পেট খুব বেশি মনে হতে পারে। শ্যাগি অ্যাকসেন্ট বালিশ, এরিয়া রাগ এবং নকল পশমের ছোট কার্পেটও একটি ঘরকে আলাদা করতে পারে। ফ্লোরিংয়ে মার্বেল বা গ্রানাইটের টুকরো ব্যবহার করে ৭০-এর দশকের আবহ তৈরি করতে পারেন। 

শতাব্দীর মাঝামাঝি এবং ৭০-এর দশকের নকশার এক সময়ের প্রধান উপাদান ছিল কাঠের প্যানেলিং। আধুনিক সময়ে তা আরও নতুন ভাবে ফিরে এসেছে। এখন হালকা কাঠ, মসৃণ রেখা এবং সৃজনশীল নকশার উপর ফোকাস করা হয়। ঘরে অতিরিক্ত আসবাব বা জিনিস না রাখাই ভালো। রেট্রো বা ভিনটেজ স্টাইল মানে এই নয় যে, ঘর অ্যান্টিক শপের মতো দেখাবে। 

রেট্রো ও ভিনটেজ স্টাইল মানে শুধু পুরোনো জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো নয়, বরং ঘরের সাজ যেনো একটি গল্প বলার মতো করে ঘরকে প্রাণবন্ত করে তোলে। সঠিক উপায়ে রং, আসবাবপত্র, আলো ও শিল্পকর্মের সমন্বয়ে আপনি সহজেই আপনার ঘরে এনে দিতে পারেন সেই অতীতের মোহময়তা ও উষ্ণতা। তাই এবার ঘরের পুরোনো কোণটাকেই করে তুলুন স্টাইলিশ, রেট্রো ও ভিনটেজ স্পর্শে।

Read more