বাংলাদেশে ডেলিভারি সার্ভিসের বিবর্তন: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া এক ইন্ডাস্ট্রির গল্প
বাংলাদেশের ডেলিভারি সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি গত কয়েক দশকে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। অতীতে গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র কিংবা প্রয়োজনীয় কিছু পাঠানোর জন্য মানুষ ভরসা করতো ডাক বিভাগের উপর। ডাক বিভাগ সেগুলো পৌঁছে দিত কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। নিজের চিঠি বা পণ্য পাবার জন্য মানূষ অপেক্ষা করতো দীর্ঘদিন, কখনও হয়ত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সবকিছু সঠিক সময়ে এসে পৌঁছাতও না। সেই ঐতিহ্যবাহী ডাক বিভাগ থেকে আজকের আধুনিক ডেলিভারি সার্ভিস- বাংলাদেশের এই ইন্ডাস্ট্রি পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ পথ। এই বিবর্তনের পেছনে রয়েছে গ্রাহকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও ই-কমার্সের ব্যাপক প্রসার।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
স্বাধীনতার পর ডাক বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডেলিভারি সার্ভিসের যাত্রা শুরু। চিঠি, পার্সেল, গুরুত্বপূর্ণ দলিল কিংবা কোনো পণ্য আনা নেয়ার জন্য মানুষের কাছে অপশন ছিল একটাই- ডাক বিভাগ। নির্ভরযোগ্য জায়গা হলেও ডাক বিভাগের গতি ছিল ধীর। এছাড়া সবজায়গায় ডাক বিভাগ পৌঁছাতেও পারতো না। ব্যবসা কিংবা ব্যক্তিগত কোনো কারণেও কোনোকিছু দ্রুত প্রয়োজন হলেও কিছু করার থাকতো না মানুষের।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে আবির্ভাব হয় কুরিয়ার সার্ভিসের। দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো প্রবেশ করে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস। এছাড়াও স্থানীয় কিছু কুরিয়ার সার্ভিস কাজ শুরু করে। নিরাপদ ও দ্রুত ডেলিভারি দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো মানুষের কাছে আস্থার নাম হয়ে উঠতে শুরু করে। ব্যবসায়িক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাগজপত্র, দলিলপত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য পরিবহনের জন্য কুরিয়ার সার্ভিস আত্মপ্রকাশ করে নতুন মাধ্যম হিসেবে।
ই-কমার্সের উত্থান ও নতুন রূপে ডেলিভারি সার্ভিস
২০১০ এর দশকে ইন্টারনেটের প্রসারের হাত ধরে উত্থান লাভ করে ই-কমার্স। অনলাইনের দুনিয়ায় কেনাকাটার জন্য তৈরি হয় ই-কমার্স। বাসায় বসেই প্রোডাক্ট দেখতে পারা, একটি পছন্দ না হলে অন্য প্রোডাক্ট দেখা, নিজের পছন্দমতো প্রোডাক্ট পছন্দ করা ও বাসায় বসেই তার ডেলিভারি নেয়া- এইসব দারুণ সব ফিচার প্রথমবারের মতো গ্রাহকেরা এক্সপেরিয়েন্স করে। স্বাভাবিকভাবেই ই-কমার্স হয়ে ওঠে ব্যবসার নতুন হাব এবং এরই হাত ধরে ডেলিভারি সার্ভিস তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ই-কমার্স একইসাথে ব্যবসার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করে ও ডেলিভারি সার্ভিসকে হাজির করে একদম নতুন রূপে।
প্রযুক্তির আশীর্বাদ ও ডেলিভারি সার্ভিসের পরিবর্তন
গত এক দশকে মানুষ দেখেছে প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য অগ্রগতি। ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষ এখন ঘরে বসেই যেকোনো সেবা পাচ্ছে সহজেই। ডেলিভারি সার্ভিসেও এই ইন্টারনেটের ছোঁয়া লেগেছে। হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট, মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার ডেলিভারি সার্ভিসকে আরও সহজ এবং সুবিধাজনক করে তুলেছে। কেউ প্রোডাক্ট পাঠানোর পর থেকেই এখন ঘরে বসে দেখতে পারেন, তার প্রোডাক্ট কতদূর গিয়েছে, এখন কোন জায়গায় আছে। রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং ছাড়াও ডেলিভারি ম্যানের সাথে যোগাযোগ, অনলাইন পেমেন্ট, রিভিউ দেখে সার্ভিস নেয়ার সুবিধাসহ নানানভাবে পুরো সার্ভিস আরও সহজ হয়ে উঠেছে গ্রাহকের কাছে।
এছাড়াও, জিপিএস, রুট অপ্টিমাইজেশন, এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার ডেলিভারি সার্ভিসকে আরও দ্রুত, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী করে তুলেছে। এছাড়াও বিগ ডেটা ব্যবহার করে গ্রাহকের চাহিদা ও অভ্যাস বিশ্লেষণ করে ডেলিভারি সার্ভিস কোম্পানিগুলো তাদের সেবা আরও উন্নত করতে সক্ষম হচ্ছে।
প্রযুক্তির এই অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করেছে Lalamove এর মতো ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম। ব্যবসার জন্য শেষ মাইল ডেলিভারি (Last Mile Delivery Solution), একই দিনে ডেলিভারি (Same Day Delivery Service), সাশ্রয়ী অনলাইন ডেলিভারি সার্ভিস (Affordable Online Delivery Service) এর জন্য গ্রাহক এখন সহজেই ভরসা রাখে Lalamove এর উপর। দ্রত ডেলিভরি (Fast Delivery Option) কিংবা Express Delivery Solution হিসেবেও Lalamove এখন গ্রাহকের কাছে আস্থার নাম। বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে Lalamove পণ্য পরিবহনের সুবিধা দেয়, এছাড়াও তাদের আছে হাউস শিফটিং সার্ভিস, যা ব্যস্ত জীবনে বাসা বদলের মতো ঝামেলাকে করেছে সহজ ও আধুনিক।
আজকের দিনে ডেলিভারি সার্ভিস
ডেলিভারি সার্ভিস এখন বেশ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পরিণত হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা এখন কাজ করছে এই সেক্টর নিয়ে। বেশ কিছু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তাদের নিজস্ব ডেলিভারি সার্ভিসও চালু করেছে। এখন ডেলিভারি সার্ভিস সহজলভ্য, E-commerce Delivery তেও গ্রাহক এখন ভরসা রাখে আধুনিক ডেলিভারি সার্ভিসের উপর।
সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ
ই-কমার্সের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি, এবং নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব এই ইন্ডাস্ট্রির প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করছে।
যানজট, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, এবং প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব এই ইন্ডাস্ট্রির প্রবৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও, গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন, ডেলিভারি চার্জ কমানো, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও অনলাইন পেমেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
Lalamove: নতুন প্রজন্মের ডেলিভারি সমাধান
Lalamove বর্তমানে গ্রাহকের কাছে আস্থার নাম। দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য, অন ডিমান্ড ডেলিভারি, যেকোনো আকারে ব্যবসার জন্য অগ্রিম অর্ডার ডেলিভারি এখন খুবই সহজ। যেকোনো প্রকার ডেলিভারি শহরের যেকোনো স্থানে পৌঁছানোর জন্য সহজেই মানুষ এখন ভরসা রাখেন Lalamove-এ।
Lalamove ব্যবহারকারীদের তাদের অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের বাহন যেমন মোটরসাইকেল, ও ট্রাক বুক করার সুবিধা দেয়। এর ফলে গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী যানবাহন বেছে নিতে পারেন।
শেষ কথা
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ডেলিভারি সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি আজ সম্পূর্ণ নতুন এক রূপ ধারণ করেছে। Lalamove এর মতো নতুন প্রজন্মের ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মগুলো এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে এবং সেবার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এই ইন্ডাস্ট্রি আরও বিকশিত হবে এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ এবং সুবিধাজনক করে তুলবে বলে আশা করা যায়।