ব্যাচেলর বাসা হোক মনের মতোন

featured image

ব্যাচেলর বাসা সাজানো সহজ নয়। সাধারণত, ব্যাচেলরদের বাসা আকারে ছোট হয়ে থাকে অথবা একটি রুমেই সীমাবদ্ধ থাকে। সে সাথে রয়েছে আর্থিক সীমাবদ্ধতা। তাছাড়া সবকিছু সামলিয়ে একা বাসা সাজানো কঠিন কাজে পরিণত হয়ে যায় ব্যাচেলরদের জন্য। কিন্তু, আপনার বাসা আপনার বিশ্রাম আর আরামে সময় কাটানোর স্থান। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর, এক টুকরো শান্তির আবাস। সেটি যদি একটু গোছানো না হয়, তা মানসিক প্রশান্তি বাধাগ্রস্ত করে। 

তবে অল্প কিছু টিপস মেনে চললেই আপনার এই কঠিন কাজ সহজ হয়ে উঠবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো কীভাবে সহজে এবং সাশ্রয়ী উপায়ে ব্যাচেলর বাসা সাজাতে পারেন। আশা করি, আপনার ছোট্ট নীড় সুন্দর আর গোছানো রাখতে আর কষ্ট করতে হবে না।  

লাইফস্টাইল অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন 

প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো আপনার লাইফস্টাইল অনুযায়ী ঘর সাজানোর প্ল্যান করা। আপনার প্রতিদিনের রুটিন, আপনার জন্য কী গুরুত্বপূর্ণ, আপনার অভ্যাস, যেমন, আপনি রান্না করতে পছন্দ করেন না কি বাইরে থেকে খাবার আনবেন ইত্যাদি। একটি বিস্তারিত প্ল্যান আপনাকে সাহায্য করবে সবসময়। ঘরে কী কী রাখবেন, কী কী কিনতে হবে এসবও যুক্ত করতে ভুলবেন না। 

কালার প্যালেট 

আপনার ঘরের জন্য একটি কালার প্যালেট বাছাই করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভালো হয় যদি একটি নিউট্রাল প্যালেট ব্যবহার করেন। যেমন বেস হিসাবে সাদা, ধূসর এবং সাথে আপনার ব্যক্তিত্ব ও স্টাইলকে তুলে ধরে এমন একটি রং যোগ করুন। আপনার বাসায় প্রশান্তি আনতে বেছে নিন সবুজ, হালকা নীল, বাদামি এমন রং। নিউট্রাল এই রংগুলো সহজেই বাসার ডিজাইন আর আসবাবপত্রের সাথে মিলে যায়। সাথে আসবাব এবং ঘর সাজানোর জিনিস দিয়ে একটু মিক্স ম্যাচ করুন, যেমন হালকা সোফায় গাঢ় রঙের বালিশ রাখতে পারেন।  

আলো 

আলোর সঠিক ব্যবহার ঘরকে অসাধারণ করে তুলতে পারে। আপনার কাজ বা পড়ার টেবিলে যাতে আলো সরাসরি পড়ে তা খেয়াল রাখবেন। জানালার কাছে কোনো আসবাবপত্র রাখবেন না, যাতে নেচারাল আলো আসে। এলইডি লাইট ব্যবহারে খরচ কমবে। অন্য সময়ের জন্য ডিম লাইট ব্যবহার করতে পারেন। টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প, স্ট্রিং লাইট রাখতে পারেন।

আয়নার ব্যবহার 

আপনার ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টকে আরও সুন্দর এবং আলোকিত করতে আয়না একটি চমৎকার উপায়। দেয়ালে একটি বড় আয়না ঝুলিয়ে দিন। আয়নার পিছনে হুক দিয়ে ব্যাগ, প্রতিদিনের ব্যবহারের প্রয়োজনীয় জিনিস ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। বেত, বাঁশ বা প্লাস্টিকের তৈরি অর্গানাইজার আয়নার পাশে রাখতে পারেন। ড্রেসিং টেবিলের খরচ বাঁচবে, ঘরে নতুনত্ব আসবে। 

লিভিং রুম

লিভিং রুম থাকলে তার ডেকোরেশনে মনোযোগ দেবার চেষ্টা করুন কারণ, বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথেই বসার ঘরটি আগে দেখা যায়। একে আরামদায়ক এবং গোছানো রাখুন। আসবাবপত্র এমনভাবে সাজান যাতে অতিথিরা একসাথে বসে গল্প করতে পারে। লিভিং এলাকায়, একটি বড় এবং আরামদায়ক সোফা, লাউঞ্জ চেয়ার, কফি টেবিলের চারপাশে বড় ফ্লোর কুশন বা কার্পেট দিয়ে সাজানো জায়গা থাকতে পারে। টিভির জায়গায় প্রজেক্টরও থাকতে পারে। কফি টেবিলের ড্রয়ার, তাক, হুক বা সেলফ স্টোরেজের জন্য ব্যবহার করুন। সাথে আপনার বাসা গোছানো রাখতে নিয়মিত ডিক্লাটার করতে ভুলবেন না।

রান্নাঘর

ব্যাচেলর বাসায় আলাদা রান্নাঘর পাওয়া দুষ্কর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শেয়ার করে কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে, আপনার নিজের ব্যবহৃত জিনিসগুলো আলাদা কোনো শেলফ, বেতের ঝুড়ি বা কিচেন অর্গানাইজারে রাখতে পারেন। যদি আপনার নিজস্ব রান্নাঘর থাকে, তাহলে রান্নাঘর আর লিভিং রুমের মাঝের স্থানে ছোট টেবিল আর চেয়ার দিয়ে ডাইনিং রুম বানিয়ে নিতে পারেন। কেননা, আলাদা ডাইনিং রুম না থাকাই স্বাভাবিক। আবার আপনার খাবার আনা নেওয়ার কাজও সহজ হবে। 

ডাইনিং টেবিলের ক্ষেত্রে পাব স্টাইল টেবিল বা ২-৪ চেয়ারের ডাইনিং টেবিল নিতে পারেন। গাঢ় বাদামি বা কাঠের রঙের টেবিল ঘরে একটি ভিন্টেজ আবহ তৈরি করবে। টেবিলের উপর টেবিল ক্লথ দিতে ভুলবেন না। যদি সেটিও সম্ভব না হয়, তবে ছোট প্লাস্টিকের কম দামি ফোল্ডিং টেবিল পাওয়া যায়। বিছানার উপর বা মেঝেতে টেবিল বিছিয়ে খেতে পারেন। 

বেডরুম 

আপনার বাসার আকারের উপর নির্ভর করে, আপনার বেডরুমটি বিভিন্ন রকম হতে পারে। বেডরুমে একটি ছোট খাট, আলমারি, টেবিল, আয়না ইত্যাদি থাকে সাধারণত। খাটের ক্ষেত্রে চাইলে বক্স খাট ব্যবহার করতে পারেন যা একইসাথে স্টোরেজের কাজ করবে। চাইলে মাল্টিফাংশন ফার্নিচার যেমন সোফা-বেড ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার অর্থ আর জায়গা দুইই বাঁচবে। হালকা রঙের চাদর ঘরে প্রশান্তির ছায়া আনবে। 

ঘরের কোণে রাখতে পারেন ইয়োগা ম্যাট, জিমের সরঞ্জাম। ঘরেই সেরে নিতে পারেন ব্যায়াম, এতে জিমের অর্থ বাঁচবে। খাটের পাশের সাইড টেবিলে পানি, ছোট ল্যাম্প, বই বা জার্নাল রাখতে পারেন। জানালার ধারে ছোট ছোট গাছ ঘরের শোভা বাড়াবে। 

ঘর সাজানো 

ঘরে প্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে কিছু সাজসজ্জার জিনিসও রাখুন। তাহলেই ঘর আপন মনে হবে, শান্তি খুঁজে পাওয়া যাবে। মূল আসবাবের সাথে কিছু ভিন্ন আসবাবপত্র যুক্ত করুন। যদি কফি টেবিল, সাইড টেবিল এবং কোনো বুকশেলফ বা তাক যুক্ত করতে চান; সেখানে সমসাময়িক কোনো শিল্পীর ভাস্কর্য এবং আর্ট ওয়ার্ক রাখতে পারেন। তাকগুলোতে বই, মুভি বা রেকর্ডের সংগ্রহ রাখতে পারেন। 

দেয়ালে বিভিন্ন শিল্পীর পেইন্টিং যোগ করতে পারেন, ছোট মেমরি ওয়াল তৈরি করতে পারেন। যেমন প্রাকৃতিক দৃশ্যের আইকনিক ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং, প্রিয় খেলোয়াড় বা টিমের জার্সি, ব্যান্ড বা কনসার্টের পোস্টার অথবা ফ্রেম ইত্যাদি দিয়ে দেয়াল সাজাতে পারেন।  

মেঝেতে ছোট কার্পেট বা পাটি রাখতে পারেন। তুলা, উল বা পশমের মতো প্রাকৃতিক উপকরণ বেছে নিন যা নরম এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে। ঘরের সাজে ভিন্নতা যোগ করতে বিভিন্ন টেক্সচার এবং প্যাটার্ন ব্যবহার করুন। রান্নাঘরের টেবিলের জন্য প্লেসম্যাট, ওয়ালহুক, হালকা রঙের পর্দা যুক্ত করতে পারেন। এগুলো দামে কম, সংরক্ষণ করাও সহজ এবং ঋতু অনুসারে পরিবর্তন করা সহজ। 

ঘরে প্রকৃতির ছোঁয়া আনতে গাছের জুড়ি নেই। সেক্ষেত্রে কম রক্ষণাবেক্ষণের গাছগুলো বেছে নিন। যেমন স্নেক প্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, স্পাইডার, মানি প্ল্যান্ট ইত্যাদি। এগুলোর জন্য খুব বেশি সূর্যালোক বা যত্নের প্রয়োজন হয় না।

আপনার স্পেশাল কোনো কিছুর কালেকশন থাকলে তা অবহেলা করবেন না। এই আইটেমগুলো ঘর সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন।  আপনার বাসাকে অন্য ব্যাচেলর বাসা থেকে আলাদা করবে সাজের এই ভিন্নতা। বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে রাখতে পারেন বিভিন্ন বোর্ড গেম। 

ঘরের একটা অংশ বা কর্নার রাখুন নিজের জন্য, নিজের সাথে একান্তে সময় কাটাতে। বেশি কিছু না, একটি আরামদায়ক চেয়ার, কুশন আর চা রাখার ছোট টেবিল। যেখানে আপনি বসে বই পড়তে পারবেন, আকাশ দেখতে পারবেন। বাসাকে সহজ এবং ছিমছাম রাখুন। ঠিক যা যা লাগবে তাই যুক্ত করুন। এতে ঘর পরিষ্কার করা সহজ হবে, বাসা বদলাতে কষ্ট কম হবে, খরচ কমবে এবং ঘর গোছানো দেখাবে।  

ব্যাচেলরদের বাসা পাওয়া দুর্ভাগ্যবশত কঠিন। বারবার পরিবর্তনও করতে হয়। সেক্ষেত্রে কম জিনিস থাকা ভালো। কিন্তু, অল্প সময় থাকতে হবে বলে, ঘরকে নিজের করে নেওয়া যাবে না তা নয়। যতটুক সময়ই থাক, বাসাকে নিজের মতো সাজিয়ে নিতে হবে। বিস্তারিত প্ল্যান আর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সহজেই ব্যাচেলর বাসা সাজানো যায়। কঠিন নিয়ম মানতে হবে এমনও নয়, নিজের সৃজনশীলতা ব্যবহার করুন। ইন্টারনেট থেকে অনেক আইডিয়াও নিতে পারেন। আশা করি, আমাদের টিপস আপনার এই যাত্রা আরও সহজ করবে। 

ব্যাচেলর বা ফ্যামিলি; শহরের সবচেয়ে সাশ্রয়ী রেটে হোম শিফটিং এর জন্য এখনই ইন্সটল করুন লালামুভ অ্যাপ

 

Read more