ব্যাচেলরদের বাসা বদলের সময় যে ৬টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

featured image

ব্যাচেলরদের বাসা বদলের সময় যে ৬টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে 

বাসা বদল এমনিতেই একটি কষ্টসাধ্য কাজ। নতুন বাসা, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে যে কারোই সময় লাগতে পারে। সেখানে, যদি অন্য শহর বা দেশ হয় তাহলে তো কথাই নেই। পরিবারের সাথে যদিও এটি কিছুটা সহজ হয়। সবাই মিলে কাজ ভাগ করে নেওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টা আনন্দদায়কও হয়ে ওঠে।

কিন্তু, সবার সে সুবিধা থাকে না। পড়াশুনা, চাকরিসহ বিভিন্ন কারণে অনেককে একা থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে বাসা খোঁজা, নতুন বাসায় আসা সবমিলিয়ে একজন ব্যাচেলরের অনেক রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। মনে হতে পারে, ব্যাচেলরদের জিনিসপত্র, আসবাব কম থাকে; তাদের কাজ সহজ হওয়ার কথা। কিন্তু একা করতে গেলে, সবচেয়ে সহজ কাজও কঠিন হয়ে যায়। 

বিশেষ করে যারা প্রথমবার বাসা শিফট করছেন তারা অল্প কিছু টিপস ফলো করলেই খুব সহজে এই কাজটি করতে পারবেন। আজকের লেখায় এমনই ৬টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, যা মেনে চললে ব্যাচেলরদের বাসা বদল হবে নিশ্চিন্তে।

 

১। মানসিক প্রস্তুতি

সবার আগে প্রয়োজন মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া। বিশেষ করে আপনি যদি প্রথমবার পরিবারের সাথে আসেন, আর এটিই আপনার প্রথম একা বাসা বদলের অভিজ্ঞতা; সেক্ষেত্রে মানসিক চাপ ও বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক। তবে, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনার এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়।  আপনার বন্ধু এবং পরিচিতদের কাছ থেকে টিপস নিতে পারেন। তাদের সাহায্য চাইতে পারেন।  বরং, এই সুযোগকে একটি নতুন অভিজ্ঞতার মতোই দেখুন। এর মধ্য দিয়ে নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলুন এবং একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা ভাবুন।

২। শিফটিং এর পূর্বের প্ল্যানিং

আপনার বাসা বদলের পুরো প্রক্রিয়া সহজ রাখতে প্রথমেই একটি ডিটেইল চেকলিস্ট তৈরি করে নিন। আর প্রতিটি কাজ শেষে লিস্ট চেক করতে থাকুন।

  • প্রথমেই বাসা শিফটের তারিখ ঠিক করুন। যাতে সেই হিসাবে আপনি সবকিছু প্ল্যান করতে পারেন।
  • একটা বাজেট তৈরি করুন। মুভিং সার্ভিস নিলে তার খরচ যুক্ত করুন বাজেটে। কোন ধরনের যানবাহন লাগবে, প্যাকিংয়ে কত খরচ, নতুন বাসায় কোনো বাড়তি খরচ ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে লিখে রাখুন। 
  • বর্তমানে যেখানে আছেন, তাদের অন্তত ১-২ মাস আগে জানিয়ে দিন। অনেক বাসায় নির্দিষ্ট সময়ে জানিয়ে দেওয়ার চুক্তিও থাকে।
  • এডভান্স টাকার হিসাব কীভাবে করবেন সে বিষয়ে আলোচনা করে নিন। শেষ মুহূর্তে যাতে কোনো বড় সমস্যায় না পড়তে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। 
  • নতুন এলাকা সম্পর্কে খোঁজখবর নিন, বিশেষ করে যাতায়াত ব্যবস্থা, কাঁচাবাজার, নিরাপত্তাজনিত বিষয় ইত্যাদি।
  • জিনিসপত্র গোছানো শুরু করুন। প্রথমেই, অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দেওয়া থেকে শুরু করুন। মনে হতে পারে, একজন ব্যাচেলরের বেশি জিনিস থাকবে না গোছানোর জন্য। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে প্যাকিংয়ে ঝামেলায় পড়ে যেতে হয়। 

চাইলে কিছু জিনিস বিক্রি করে দিতে পারেন, সম্ভব হলে দান করেও দিতে পারেন বা একবারেই ব্যবহার যোগ্য না হলে ফেলে দিতে পারেন। এটি আপনার প্যাকিং সহজ করবে, আর নতুন বাসায় জায়গা নষ্ট করবে না।

৩। মুভিং সার্ভিস বুক করা

আপনার মনে হতেই পারে আপনি পুরো কাজ একা করতে পারবেন। এটি অসম্ভব কিছু না, তবে যদি সম্ভব হয় একটি মুভিং সার্ভিস বুক করলে আপনার কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে। যেহেতু তারা পেশাদার মুভার্স, প্যাকিং থেকে লোডিং এবং কিছু ক্ষেত্রে নতুন বাসা গোছানোতেও তারা সাহায্য করবে। আপনি তাদের কাছ থেকে অনেক টিপসও পাবেন। 

তাই আগেই মুভিং সার্ভিস বুক করে নিন। ভালোভাবে বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে রিসার্চ করুন, তাদের অফার আর প্যাকেজ দেখুন। আপনার জন্য কোনটা ভালো হতে পারে জানুন। অফ সিজনে বুক করলে কিছুটা কম খরচ পড়তে পারে। মুভার্সদের সাথে সব বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলে নিন।

৪। প্যাকিং টিপস

প্যাকিং থেকেই আসল কাজ শুরু হয়। তাই সময় নিয়ে প্যাকিং শুরু করুন। আবার এতো আগেও না যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য প্রতিবার প্যাকিং বক্স খুলতে হয়। সেক্ষেত্রে, অফ সিজন আইটেম বা প্রতিদিন লাগবে না এমন জিনিস দিয়ে প্যাক করা শুরু করুন।

  • কী কী প্যাক করতে হবে তার একটা আলাদা লিস্ট করুন। পারলে কোথায় কী রাখবেন সেটাও যুক্ত করতে পারেন। ফলে লেবেলিংয়ে কাজ আরও সহজ হবে।
  • প্যাকিং-এর সরঞ্জাম সংগ্রহ করুন। চাইলে সবকিছু কিনতে পারেন, আবার অন্য কারো কাছ থেকে কিছু জিনিস ধার নিতে পারেন। বক্স, দড়ি, স্কচটেপ, মার্কার, কাঁচি ইত্যাদি ছাড়াও আপনার আসবাবভেদে বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন হতে পারে। সবকিছু হাতের কাছে রাখুন, তাহলে প্যাকিং সহজ মনে হবে।
  • কীভাবে প্যাকিং শুরু করবেন তার একটা প্ল্যান রাখতে পারেন। রুম অনুযায়ী করবেন না কি জিনিসপত্র অনুযায়ী তা ঠিক করে গুছিয়ে প্যাকিং শুরু করুন।
  • নতুন বাসায় উঠতেই যেসব জিনিস প্রথমে লাগবে তা একটা আলাদা ব্যাগে নিয়ে নিন। যেমন, পোশাক, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র, শুকনো খাবার ইত্যাদি।
  • আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, টাকা, দামি জিনিস আলাদাভাবে প্যাক করুন। একা যদি এসব সামলিয়ে রাখতে না পারেন তবে বিশ্বস্ত কারো কাছে বা ব্যাংকে রাখুন।
  • প্রতিটি বক্স ডিটেইলড লেবেলিং করুন। কী কী আছে, কোথায় থাকবে সবকিছু লিখে রাখলে আপনার আনপ্যাক করতেও সহজ হবে।
  • দামি এবং ভঙ্গুর জিনিস প্যাকিংয়ের বিশেষ নিয়ম ফলো করুন। 

৫। শিফটিং এর দিনের প্রস্তুতি

শিফটিং এর দিন অনেক রকমের অনুভূতি হতে পারে। নতুন জায়গায় যাওয়ার আনন্দ থেকে পুরানো জায়গা ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট, আবার এতো বড় কাজ একা করার দুশ্চিন্তা- সব মিলিয়ে এই দিনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুত থাকতে হবে।

  • মুভিং ডে চেকলিস্ট তৈরি করুন।
  • নতুন বাসার ঠিকানা, সেখানে গ্যাস, পানি, ইলেক্ট্রিসিটি, ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।
  • পুরানো বাসায় কোনো কিছু বাকি থেকে গেলো কি না, কোনো বিল বা আসবাব তা চেক করে নিন।
  • ভারি জিনিস বা আসবাব সরানোতে সতর্কতা অবলম্বন করুন। 

৬। নতুন বাসায় আসার পর করণীয়

নতুন বাসায় আসার পর আবারও নতুন চিন্তা ভর করতে পারে। কীভাবে সব আনপ্যাক করবেন, নতুন ঘর সাজাবেন ইত্যাদি। চিন্তা না করে প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করুন।

  • প্রথমেই চেক করে নিন সব বক্স এসেছে কি না। দামি আর ভঙ্গুর আসবাব চেক করে নিন।
  • একদিনেই সব আনপ্যাক করবেন না কি সময় নিয়ে তা আগেই ঠিক করে রাখুন।
  • আসবাবপত্র ঠিক জায়গায় রাখা, ভারি আসবাব নাড়াচাড়া করা ইত্যাদি কাজ একা একদিনে করার থেকে মুভারদের দিয়ে করা ভালো। সেক্ষেত্রে, প্রথমেই বড় আসবাবপত্রগুলো নির্দিষ্ট রুম বা স্থান অনুযায়ী রাখতে হবে।
  • গ্যাস, পানি, ইলেক্ট্রিসিটি, ইন্টারনেট সংযোগ আবারও চেক করে নিন ব্যবহারের আগে।
  • আনপ্যাক করে ঘর সাজানোর বিষয়টি প্ল্যান করে নিন। বক্সের লেবেল দেখে রুম বা স্থান অনুযায়ী আনপ্যাক করুন। যেহেতু, বড় আসবাবগুলো আগেই সেট হয়ে গিয়েছে, বাকি বক্স আনপ্যাক করা সহজ হবে। চাইলে, একই টাইপ জিনিস একসাথে আনপ্যাক করুন। যেমন, আগে কাপড়চোপড় রাখলেন, তারপর বই, তারপর রান্নার সামগ্রী ইত্যাদি।
  • নতুন কমিউনিটির সাথে যুক্ত হয়ে যান। বিভিন্ন ক্লাব বা গ্রুপে যোগ দিতে পারেন।

বাসা বদল যে কারো জন্য চ্যালেঞ্জিং। ব্যাচেলরদের জন্য তা আরও জটিল। কিন্তু, এই কাজটা সফলভাবে করলে অন্যরকমের আনন্দ পাবেন। তাই, এই সফলতাকে উপভোগ করুন এবং উদযাপন করতে ভুলবেন না। এসব কিছুর মাঝে নিজের যত্ন নিন। আশা করি, আমাদের টিপস আপনার এই যাত্রাকে আরও সহজ করে তুলবে। 

Read more