রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ: সফল হওয়ার ৬টি কার্যকর টিপস

featured image

বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে, রিয়েল এস্টেট হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বড় বিনিয়োগ খাত। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করতে চাইলে, এখনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এটি হতে পারে আপনার অন্যতম সেরা বিনিয়োগ। তবে আপনি যদি এই সেক্টরে নতুন হন, তাহলে অবশ্যই কিছু বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে । আজকের আর্টিকেলে এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. গবেষণা 

যেকোনো নতুন কাজের শুরুতে সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের আগে দেশের আবাসন খাত বিষয়ে সময় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণা করতে হবে। এলাকাভেদে প্রপার্টির দাম ও চাহিদা, কোন এলাকায় কোন ধরনের ভবন বা জমির চাহিদা, পরিবেশ, নিরাপত্তা, বাজার মূল্য, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ নিন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। এরপর আপনার বাজেট অনুযায়ী একটি পরিকল্পনা করে ফেলুন।

২. বাজেট 

গবেষণার পরই দেখতে হবে আপনার বাজেট কত। স্পষ্টভাবে বাজেট তৈরি করুন। আপনি কত টাকা দিতে পারবেন, কত টাকা লোন নিতে হবে, কিস্তি কত হবে সব ব্যাপারে সচেতন থাকুন। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে বসবাসযোগ্য জমির চাহিদা বাড়বে। কিন্তু জমির পরিমাণ যেহেতু কম, তাই দাম বাড়বে। একই সাথে দেখতে হবে, আপনার ইমার্জেন্সি ফান্ড আছে না কি। সে সাথে অবশ্যই কাদের সাথে বা কোথায় বিনিয়োগ করছেন, সে খোঁজখবর নিতে হবে। শহরের বাইরে কিছুটা কম দামে আপনি চাইলে জমি কিনতে পারেন, যার দাম কয়েক বছরে বেড়ে যাবে। তবে সেজন্য আপনার মুদ্রাস্ফীতির ব্যাপারও মাথায় রাখতে হবে, কেননা এর ফলে টাকার দাম কমে যাচ্ছে।

৩. নতুন না পুরাতন প্রপার্টি? 

নতুন প্রপার্টিতে নিরাপত্তা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকে, তবে দাম বেশি হতে পারে। অন্যদিকে, পুরাতন প্রপার্টির দাম কম, কিন্তু তা  ঠিকঠাক করতে অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। তাই আপনার বাজেট ও সুবিধা অনুযায়ী প্রপার্টি পছন্দ করুন।

৪. কাগজপত্র 

রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো কাগজপত্র চেক করা। ভুল হলেই জাল কাগজপত্র দিয়ে আপনার বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। জমির দলিল, খতিয়ান, অনুমোদন, নির্মাণ অনুমতি, ব্যাংক চেক ইত্যাদি ভালোভাবে দেখে নিবেন। একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্য নিলে, কাজ আরও সহজ ও নিরাপদ হবে।

৫. ভবিষ্যৎ লাভ

একটি ভালো বিনিয়োগ মূলত ভবিষ্যতের কথা ভেবেই করা হয়। তাই জমির ভবিষ্যৎ মূল্য, এলাকা কতটুকু উন্নত বা উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে তা দেখতে হবে। যেমন এলাকায় নতুন রাস্তা, মেট্রো, এক্সপ্রেসওয়ে, প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ বা শিল্প এলাকা হলে তার দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।  জমির দাম বাড়ছে, কিন্তু কোনটা কত দ্রুত বাড়ছে তা দেখতে হবে। চাইলে  কয়েকজন মিলে বিনিয়োগ করতে পারেন।

৬. সঠিক রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ কৌশল 

রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের জন্য একাধিক কৌশল রয়েছে। যেটি আপনার জন্য সেরা, সেটি বাছুন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে   জমি বা বাড়ি কিনে দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রেখে এর দাম বৃদ্ধি করা এবং সে সময়ে ভাড়ার মাধ্যমে আয় করা। 

তারপর আছে হাউজ হ্যাকিং। যেখানে আপনি একটি ডুপ্লেক্স বা ট্রিপলেক্স বাড়ি কিনে, এর একটি ইউনিটে থেকে অন্যগুলো ভাড়া দিবেন। এটি নতুনদের জন্য রিয়েল এস্টেট বাজারে প্রবেশের একটি দুর্দান্ত উপায়।  

আরও পড়ুন রিয়েল এস্টেট ব্যবসার বর্তমান ট্রেন্ড


নতুনদের জন্য যারা সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্ব ছাড়া বিনিয়োগ করতে চান, রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ ট্রাস্ট (REITs) তাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে। এ ধরনের কোম্পানি আয়-উৎপাদনকারী রিয়েল এস্টেট পরিচালনা করে। এখানে বিনিয়োগ করে, আপনি বাণিজ্যিক সম্পত্তি, শপিং মল বা অফিস ভবন থেকে উৎপাদিত আয়ের একটি অংশ উপার্জন করতে পারেন। 

রিয়েল এস্টেট ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মগুলো REIT-এর মতোই, তবে এগুলো সবই ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত হয় এবং প্রকাশ্যে লেনদেন করা হয় না। ক্রাউডফান্ডিং আপনাকে বৃহত্তর রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে অল্প পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করতে দেয়। 

ফিক্স-এন্ড-ফ্লিপ কৌশলের মাধ্যমে সম্পত্তি কিনে সেগুলো সংস্কার করে লাভের জন্য বিক্রি করা হয়। তবে এখানে বাড়তি খরচ এবং পরিশ্রম রয়েছে। 

রিয়েল এস্টেট সিন্ডিকেশন হলো সম্মিলিতভাবে একটি বড় এবং দামি জমি বা সম্পত্তি কেনা। সিন্ডিকেটর বা স্পনসর সম্পত্তি পরিচালনা করেন এবং প্যাসিভ বিনিয়োগকারীরা মূলধন সরবরাহ করেন। নতুনরা এই কৌশলের মাধ্যমে বৃহৎ বাণিজ্যিক সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারে।
জমি কেনার পরের টিপস
জমি কেনার সীমানা নির্ধারণ করে আপনি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিবেন। সাইনবোর্ডে জমির ক্রয়সূত্রে-মালিকের নাম এবং নাম্বার লিখে দিন। জমি রেজিস্ট্রি করে খারিজ করে নিন। অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রেও একই কাজ করবেন। 

রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ একটি দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগ। কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত একে সবচেয়ে বড় বোঝায় রূপান্তর করতে পারে। তাই, তাড়াহুড়া করা যাবে না। কেননা ধৈর্য ও সচেতনতাই এই খাতে সফল বিনিয়োগের চাবিকাঠি। তাই সময় নিয়ে, ভালোভাবে চিন্তা করে, যত্নের সাথে যাচাই করে, উপযুক্ত পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করুন।

 

Read more