ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসায়
সারা বিশ্বেই এখন অনলাইন বিজনেস খুব জনপ্রিয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তো আছেই, যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শোরুম আছে সেসব প্রতিষ্ঠানও শোরুমের পাশাপাশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনায় এগিয়ে আসছে। ঘরে বসে পণ্য কেনার ধারণা থেকেই মূলত অনলাইন বিজনেসের সৃষ্টি। অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই যেকোনো স্থান থেকে পণ্য বেচাকেনা করতে পারেন। অনেকক্ষেত্রে টাকা পরিশোধ করা যায় ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে। এইসব সুযোগ-সুবিধার কারনে অনলাইন ব্যবসার পরিধি দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এফ কমার্স কী?
অনলাইন বিজনেসের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হল এফ-কমার্স অর্থ্যাৎ, ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসায়। ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করাকে অনেকেই এখন নিজেদের মূল পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
ফেসবুক পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তাই, ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনা এবং বিপণন করা অনেকক্ষেত্রেই লাভজনক।
এফ-কমার্স কেন সুবিধাজনক?
অনলাইন হোক আর অফলাইন হোক ব্যবসায়ের শুরুতেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। বিশেষ করে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা নতুন ব্যবসায়ীরা অনেকেই খুব অল্প কিংবা বিনা পূঁজিতেই ব্যবসা শুরু করে থাকেন। এই অবস্থায় অনলাইন ব্যবসার জন্য ডোমেইন কিনে ওয়েবসাইট তৈরী করা, ওয়েবসাইট তৈরী ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়েব ডেভেলপার নিয়োগ দেওয়া, সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার মতো জটিল এবং সময়সাপেক্ষ কাজগুলো করা বেশিরভাগ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। তাই অনলাইন ব্যবসার শুরুটা অনেকে একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমেই করে থাকেন। ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে ব্যবসায়ের সুবিধাগুলো হল-
অর্থের সাশ্রয়
ফেসবুকে পেইজ খুলতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে কোনো টাকা দিতে হয় না।
বিনামূল্যে পণ্যের বিপণন
ফেসবুকে পেইজ খুলে পণ্যের কিছু ভাল ছবি তুলে পোস্ট করা এবং প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট লেখার মাধ্যমে সহজেই ব্যবসায়ীরা নিজেদের পণ্যের পরিচিতি এবং গুণাগুণ তুলে ধরতে পারেন। আগে যেখানে নিজেদের পণ্যের কথা ক্রেতা পর্যন্ত পৌছাতেই টিভি বা পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দিতে মোটা অংকের টাকা গুণতে হত, এখন সেসব ঝামেলাই নেই। প্রতিষ্ঠিত, অপ্রতিষ্ঠিত সকল ব্যবসায়ীই এখন নিজেদের পণ্যকে সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন এক ক্লিকেই। তবে পণ্য সম্পর্কে বেশিসংখ্যক মানুষকে জানাতে ফেসবুকে পেইড অ্যাড দেবারও ব্যবস্থা রয়েছে। এটি ফেসবুক বুস্টিং নামে পরিচিত।
পরিচালনার সুবিধা
পেইজ ম্যানেজমেন্টের জন্য শুরুতেই লোকবল নিয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। একজন উদ্যোক্তা নিজেই তার ফেসবুক পেইজ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করতে পারেন। পরবর্তীতে ব্যবসায় লাভ হলে, অর্ডারের পরিমাণ বেড়ে গেলে প্রয়োজনমতো কর্মী নিয়োগ দেয়া যায়। পেইজ পরিচালনার জন্য একটি ফেসবুক পেইজের অনেকজন অ্যাডমিন থাকতে পারেন। পেইজের অ্যাডমিন কতজন হতে পারবেন তার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। একজন কর্মী কাজ ছেড়ে চলে গেলে সেই পুরোনো কর্মীকে বাদ দিয়ে নতুন কর্মীদের অ্যাডমিন হিসেবে যুক্ত করা যায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
অর্ডার গ্রহণের সুবিধা
ফেসবুকের ইনবক্সের মাধ্যমেই ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে বিক্রী-বাবদ প্রাপ্ত অর্থ পুরোটাই বিক্রেতার। ফেসবুক এই অর্থের কোনো অংশ গ্রহণ করে না।
শুরুটা হবে কীভাবে?
এফ-কমার্সের সুবিধা সম্পর্কে জানা তো হল। কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসায় শুরু করবেন কিভাবে? আপনি যদি ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসায় শুরুর চিন্তাভাবনা করে থাকেন, তাহলে নিচে থাকছে আপনার জন্য একটি পরিপূর্ণ গাইডলাইন।
ব্যবসায়ের ক্ষেত্র নির্বাচন
ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা তো করতে চান, কিন্তু, আপনি কিসের ব্যবসা করবেন? ভালো করে একবার চিন্তা করুন। পাশের বাসার ভাবী থ্রিপিস বিক্রী করে লাখপতি হয়ে গেছেন, এর মানে এই নয় যে আপনাকেও থ্রিপিসের ব্যবসা করতে হবে। হতে পারে আপনার দক্ষতা অন্যকোনো ক্ষেত্রে বেশি। আপনার সাফল্যও হয়তো অন্যকোনো ক্ষেত্রে আসবে। তাই বুঝেশুনে আপনার ব্যবসার ক্ষেত্র নির্বাচন করুন। আপনি যে ধরনের ব্যবসা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, যে ব্যবসা সম্পর্কে আপনার কিছুটা হলেও ধারণা আছে এবং যেক্ষেত্রে ঝুঁকি নেবার প্রয়োজন নেই এমন ব্যবসাকেই প্রাধান্য দিন।
বাজার যাচাই
আপনি যে ধরনের পণ্য বা সেবা নিয়ে কাজ করতে চান সেগুলোর চাহিদা কেমন সেটি আগে জেনে নিন।
পণ্য জোগাড় করা
প্রডাক্ট সোর্সিং অর্থ্যাৎ পণ্য জোগাড় করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিক্রীর জন্য আপনি পণ্য দুইভাবে জোগাড় করতে পারেন।
এক, আপনি পাইকারি মূল্যে পণ্য কিনে খুচরা বিক্রী করতে পারেন।
দুই, পণ্যগুলো আপনি নিজে তৈরী করতে পারেন।
দুই ক্ষেত্রেই পণ্য কিংবা কাঁচামালের ভাল কোনো উৎস খুঁজে বের করা জরুরী। দীর্ঘদিন ধরে মার্কেট রিসার্চ করার কোনো বিকল্প এক্ষেত্রে নেই। আপনাকে এমনকোনো উৎস খুঁজে বের করতে হবে যেখানে আপনি সাশ্রয়ী মূল্যে ভাল মানের পণ্য পাবেন। পণ্যের মান ভাল না হলে আপনার ব্যবসা শুরুতেই শেষ হয়ে যেতে পারে। আবার পণ্য ভাল কিন্তু দাম অনেক বেশি হলেও আপনার ব্যবসা লাভের মুখ দেখতে পাবে না। তাই, প্রডাক্ট সোর্সিং এর ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় ও শ্রম ব্যয় করতে হবে। ধরুন, আপনি জামদানী শাড়ির ব্যবসা করতে চান। সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে দেশের বিখ্যাত জামদানী পল্লীগুলোর অলিগলি চষে ফেলা। কোনটা ভাল শাড়ি, শাড়িগুলোর দাম কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, এসব ভালোভাবে জানতে পারলে আপনার জন্য বিচক্ষণতার সাথে ব্যবসা করা সহজ হবে।
পণ্যের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ
বাজার ঘুরে দেখে নিন আপনি যে পণ্যগুলো নিয়ে কাজ করতে চাইছেন সেগুলো কেমন দামে বিক্রী হয়। অনলাইন, অফলাইন সব ধরনের মার্কেট রিসার্চ করে আপনার পণ্যের বিক্রয়মূল্য নির্ধারন করুন। দাম অন্যদের চেয়ে বেশি হলে কেউ আপনার পেইজ থেকে কিনবে না। আবার এত কম রাখাও যাবে না যাতে আপনার লোকসান হয়।
ডেলিভারি সার্ভিস
অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্ন হল, আপনি পণ্য ডেলিভারি করবেন কিভাবে? বিশেষ করে যারা খাবারের ব্যবসা করেন, তাদের জন্য খাবারের ডেলিভারি একটি বিড়ম্বনা। কারন, অনেক নামকরা কুরিয়ার সার্ভিসই খাদ্যদ্রব্য ডেলিভারি করে না। আপনি যে পণ্য নিয়েই ব্যবসা করেন না কেন ডেলিভারি কিভাবে করবেন সেই ব্যপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। যদি নিজেই ডেলিভারি করতে চান সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যদি কোনো কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি করতে চান তাহলে একটি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিস বেছে নিন। অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য লালামুভ হতে পারে একটি বিশ্বস্ত ডেলিভারি পার্টনার। লালামুভের মাধ্যমে ঢাকার ভিতরে ছোট থেকে বড়, হালকা থেকে ভারি সকল পণ্য ঝামেলা ছাড়াই ক্রেতাদের কাছে পৌছে দেয়া সম্ভব। খাদ্যদ্রব্য, কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য লালামুভের রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। লালামুভে রয়েছে প্রয়োজনমতো বাইক, ট্রাক,সেডান কিংবা কাভার্ড ভ্যান বেছে নেবার সুযোগ। এই যানবাহনগুলোর মাধ্যমে আপনি সাশ্রয়ী ডেলিভারি চার্জের বিনিময়ে ঘরে বসেই ক্রেতাদের কাছে আপনার পণ্য পৌছে দিতে পারবেন। আর নয় কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে গাট্টি-বোচকা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। মোবাইলে আজই ইনস্টল করুন লালামুভ অ্যাপ। পিকআপ রিকোয়েস্ট পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই রাইডার এসে হাজির হবে আপনার পার্সেল পিকআপ করার জন্য। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি পিকআপ শিডিউল করতেও পারবেন। এর জিপিএস ট্র্যাকিং সুবিধাও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ কুরিয়ার হিসেবে লালামুভকে বিবেচনা করার জন্য। Lalamove তাদের নিজেদের সাথে সাথে ব্যবহারকারীকেও অর্ডারগুলিকে ট্র্যাক করতে দেয়, ব্যবহারকারীকে ভ্রমণের প্রতিটি পর্যায়ের অবস্থা জানতে দেয়। একজন ড্রাইভার রিয়েল টাইমে কোথায় আছেন তা অ্যাপের মাধ্যমে দেখা, সেই ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করা এবং ডেলিভারি সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পাবার ব্যবস্থা আছে অ্যাপটিতে ।
আপনার ট্র্যাকিং তথ্য আপনার কাস্টমারের কাছেও পাঠাতে পারেন যাতে করে তারা জানতে পারেন কখন ডেলিভারিম্যান আসবেন। এটি এই কুরিয়ার সার্ভিসের একটি অনেক বড় সুবিধা। অন্যান্য কুরিয়ারের ক্ষেত্রে কাস্টমার সঠিকভাবে জানতে পারেন না যে তাদের পার্সেল কখন আসবে। অনেক সময় দেখা যায় পার্সেল যখন আসলো, ক্রেতা তখন বাসায় থাকলেন না। টাকা পরিশোধ করা না থাকলে ডেলিভারি ম্যান পার্সেল ডেলিভারি না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। ফলে, ক্রেতা সঠিক সময়ে পার্সেল হাতে পান না। রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং সিস্টেম এই ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয় সম্পূর্ণভাবে।
Lalamove এর আরেকটি সুবিধা হল, মাল্টি-স্টপ ডেলিভারি। আপনার সময় এবং অর্থ সাশ্রয় করে একটি অর্ডারে ২০টি ড্রপ অফ পয়েন্ট নির্বাচন করা সম্ভব এই মাল্টি-স্টপ ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে।
ধরা যাক, আপনি কোনো একদিন ৫০টি পার্সেল ডেলিভারি করছেন। এর মধ্যে ১৫জন ক্রেতার ঠিকানা একই এলাকায়। সেক্ষেত্রে আপনি একটি অর্ডারেই ভিন্ন ভিন্ন ১৫টি ড্রপ অফ পয়েন্ট নির্বাচন করে ১৫ জন ক্রেতার কাছে পার্সেল পাঠাতে পারবেন। এতে আপনার পার্সেল পাঠানোর খরচ অনেক কমে যাবে।
পেইজের নাম নির্বাচন
আপনার ব্যবসায়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফেসবুক পেইজের জন্য একটি সুন্দর নাম নির্বাচন করুন। নামটা শুনলেই যেন সবাই বুঝতে পারে আপনার পেইজটিতে কী ধরনের পণ্য বা সার্ভিস পাওয়া যায়। তাই একটু ভেবেচিন্তে নাম রাখুন। নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা ছাড়াও কয়েকটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমনঃ
নামটি যেন ইউনিক হয়
যে নামটির কথা ভাবছেন সেই নামে ইতোমধ্যে অন্যকোনো পেইজ, ওয়েবসাইট বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কি না দেখে নিন। ফেসবুক এবং গুগলে ভালোভাবে সার্চ দিন। অন্যকোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে নাম মিলে গেলে আপনি পরবর্তিতে আইনী ঝামেলায় পড়তে পারেন। বিশেষত, আপনার ট্রেড লাইসেন্স পেতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, একই নামের অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারিত হয়ে তাদের ক্রেতারা আপনার পেইজে এসে নেগেটিভ রেটিং দিয়ে যাবার মতো অপ্রীতিকর অবস্থাতেও আপনাকে পড়তে হতে পারে।
নামটি যেন সহজে উচ্চারণ করা যায়
তুলনামূলকভাবে ছোট এবং সহজ একটি নাম নির্বাচন করুন। বেশি বড় নাম ক্রেতারা সহজে মনে রাখতে পারবেন না।
লোগো ডিজাইন
আপনার পেইজের জন্য একটি লোগো ডিজাইন করিয়ে নিন। পেইজ খুলতে লোগো থাকা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু এটি আপনার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য দরকার। লোগো ডিজাইনিং এর কাজটি একজন অভিজ্ঞ লোগো ডিজাইনারকে দিয়ে করান। লোগোটি আপনার ব্যবসার ধরনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। লোগোর ক্ষেত্রে জরুরী হল সাইজ অপ্টিমাইজেশন। অর্থ্যাৎ, লোগোটি এমন হতে হবে যেন মোবাইল এবং কম্পিউটার দুই ডিভাইস থেকেই আপনার ফেসবুক পেইজটি দেখলে লোগোটি পরিপূর্নভাবে দেখা যায়।
এবার ফেসবুক পেইজ ক্রিয়েট করার পালা
সব গোছগাছ সারার পর ফেসবুক পেইজ খুলতে হবে। ফেসবুক পেইজ খোলার জন্য আপনার অবশ্যই ফেসবুকে একটি আইডি থাকতে হবে। যদি মনে করেন আপনার ব্যক্তিগত আইডি দিয়ে বিজনেস পেইজ খুলবেন না, তাহলে শুধুমাত্র এই কাজের জন্যই আলাদা একটি আইডি ওপেন করে নিতে পারেন। আপনার আইডিতে লগিন করার পর ফেসবুকে হোমপেইজের Menu তে যান। তারপর Page এ ক্লিক করুন। তারপরে Create a page অপশনে গিয়ে পেইজের নাম, ক্যাটেগরি, বায়ো ইত্যাদি তথ্য দিয়ে পেইজ ক্রিয়েট করে ফেলুন।
কভার ফটো ও প্রোফাইল পিকচার নির্বাচন
পেইজের প্রোফাইল পিকচারে আপনার ব্যবসায়ের লোগো দেওয়াটাই সবচেয়ে ভাল প্র্যাকটিস। আর কভার পিকচার হিসেবে লোগোসহ আপনার কোনো পণ্যের ভাল ছবি দিতে পারেন। আপনার সার্ভিস কিংবা ইউনিক সেলিং পয়েন্ট সম্পর্কে কিছু কথাও কভার ফটোতে লেখা থাকতে পারে। প্রোফাইল পিকচার এবং কভার ফটো অবশ্যই সাইজ অপ্টিমাইজড হতে হবে। যাতে করে মোবাইল কিংবা পিসি, যে ডিভাইসই ব্যবহার করা হোক না কেন, ছবিগুলো পুরোপুরি দেখা যায়।
পণ্যের ভাল ছবি
ফেসবুকে কেউ আপনার পণ্য ধরে দেখার সুযোগ পান না। এখানে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার একমাত্র উপায় হল ছবি। কিন্তু সেই ছবিই যদি মানসম্পন্ন না হয় তাহলে আপনার পণ্য যত ভাল, যত সুন্দরই হোক না কেন ক্রেতারা কেউই পণ্যটিকে ভাল মনে করবেন না। তাই পণ্যের ঝকঝকে, পরিষ্কার ছবি ফেসবুক পেইজে আপলোড করতে হবে। ছবি তোলার জন্য যে প্রফেশনাল ক্যামেরাই প্রয়োজন, তা নয়। কিছু কৌশল জানা থাকলে মোবাইলের ক্যামেরা দিয়েও ভাল ছবি তোলা যায়। প্রয়োজনে মোবাইল ফটোগ্রাফি সংক্রান্ত বই, ব্লগ ইত্যাদি পড়ে এই বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। পণ্যের ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তুললে সাধারণত ভাল আসে। পোশাকের ছবির ক্ষেত্রে অবশ্যই পোশাকটিতে কোনোরকম কুঞ্চন থাকা যাবে না। কোঁচকানো পোশাক কি আর ক্রেতার ভাল লাগে? অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও সৌন্দর্য্যের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, অনলাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পণ্যের উপস্থাপন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পণ্যটি বাস্তবে দেখতে যেমন, ছবিতেও তেমন দেখানো জরূরী। বাস্তবের চেয়ে ছবিতে বেশি সুন্দর দেখা গেলে পণ্য বিক্রয়ের পর সেটি ক্রেতার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হবে। এমনকি ক্রেতা পণ্য ফিরিয়েও দিতে পারেন।
উপযুক্ত কন্টেন্ট
ভাল ছবির পাশাপাশি পণ্যের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে ভাল কন্টেন্ট লেখাও গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেতা যেন লেখাটি পড়েই পণ্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পেয়ে যান। পণ্যের দাম অনেকে কন্টেন্টে লিখতে চান না। সেক্ষেত্রে দাম জানতে ইনবক্সে নক করার কথাও আপনার কন্টেন্টে লিখে দিতে হবে।
সবাইকে পেইজে ইনভাইট করুন
পেইজ ক্রিয়েট করে আপনার পণ্যের ছবি ও তথ্য পোস্ট করার পর আপনার সকল ফেসবুক বন্ধুদের পেইজটি লাইক/ফলো করার জন্য ইনভাইটেশন পাঠান। আপনার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে আপনার পেইজটি শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুরা যেন জানতে পারে যে আপনি একটি ব্যবসা শুরু করেছেন। মনে রাখবেন, জীবনের প্রথম অর্ডারটা কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো পরিচিতজনের কাছ থেকেই আসে। কারন মানুষ হিসেবে তারা আপনাকে চেনেন, বিশ্বাস করেন। আপনার প্রোফাইলের work info তে আপনার ব্যবসার কথা উল্লেখ করুন এবং আপনার পেইজের লিংক সংযুক্ত করুন।
অফলাইনেও প্রচার করুন
আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে গিয়ে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় কিংবা বাচ্চার স্কুলগেটে, যেখানেই যান, আপনার ব্যবসার কথা সবাইকে জানান। আপনার ফেসবুক পেইজের নাম বলুন, মোবাইলে বের করে দেখান। মোটকথা, অনলাইন-অফলাইন সর্বত্রই আপনার ফেসবুক পেইজের প্রচারনা চালিয়ে যান পূর্ণ উদ্যোমে।
পেইজে অ্যাকটিভ থাকুন
নিজের পেইজে অবশ্যই অ্যাকটিভ থাকবেন। কোনো ক্রেতা ইনবক্সে মেসেজ দিলে বা পোস্টে কমেন্ট করলে সাথে সাথেই রিপ্লাই করার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, কাস্টমারের জরূরী কোনো দরকার থাকলে তিনি আপনার জন্য অপেক্ষা করবেন না। আপনার একটু দেরী দেখলেই অন্যকোনো পেইজে নক করবেন। আপনার মাত্র পাঁচ মিনিটের দেরীর কারনেও আপনি একজন ক্রেতা হারাতে পারেন।
রিলস এবং লাইভ
ছবির পাশাপাশি পণ্যের শর্ট ভিডিও (রিলস) আজকাল অনেকেই বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখেন। আপনার পণ্যগুলোর রিলস তৈরী করে নিয়মিত পেইজে পোস্ট করুন। আজকাল লাইভ প্রেজেন্টেশনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ফেসবুকের নামকরা পেইজগুলো নিয়মিত লাইভ প্রেজেন্টেশন করে। লাইভ প্রেজেন্টার হিসেবেও অনেকেরই নামডাক রয়েছে আজকাল। আপনার ব্যস্ত শিডিউল থেকে সময় বের করে চেষ্টা করুন পেইজ থেকে নিয়মিত লাইভ প্রেজেন্টেশন করার। বিশেষ করে যখন নতুন কোনো প্রডাক্ট আসে, তখন এটি করা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হন
ফেসবুকে প্রচুর বিজনেস গ্রুপ রয়েছে। সেসব গ্রুপে ব্যবসায়ীরা নিজেদের পণ্য সম্পর্কে পোস্ট দেন। এরকম কিছু বড় গ্রুপে যুক্ত হয়ে গ্রুপগুলোতে অ্যাকটিভ থাকুন।
বুস্টিং
উল্লেখিত সবগুলো বিষয় মেনে চলে আপনার পেইজ সুন্দরভাবে সাজানোর পর প্রয়োজনে আপনার পেইজ বুস্টিং করুন। ফেসবুক বিভিন্ন পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন সময়কালের জন্য আপনার পেইজের বিজ্ঞাপণ আপনার টার্গেট অডিয়েন্সদের প্রদর্শন করে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন, আপনার টার্গেট অডিয়েন্স আসলে কারা? তারা কোন সময়টাতে অনলাইনে বেশি থাকেন? প্রয়োজনে বুস্টিংয়ের কাজটি কোনো দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটিং ফার্মকে দিয়ে করান।
শুরু থেকেই এই নিয়মগুলো মেনে চললে ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করা আপনার জন্য লাভজনক হবে বলেই আমরা আশা করছি।