কোরবানির গরু কেনার আগে মাথায় রাখতে হবে যেসব বিষয়গুলো
আর মাত্র কয়েকদিন পরেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা বা কোরবানীর ঈদ। কোরবানীর পশু কেনার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলিম। কোরবানীর পশু অত্যান্ত সতর্কতার সাথে কিনতে হয়। পশু নির্বাচনে কয়েকটি ভুলের কারনে কোরবানী কবুল হবার সম্ভাবনাই নষ্ট হয়ে যায়। আবার গরু ঠিকমতো না চিনে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মোটাতাজা করা গরু কিনে নিজেদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছি আমরা অনেকেই। তাই কোরবানীর পশু কেনার আগে বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোরবানী সংক্রান্ত সকল মাসআলা-মাসায়েল আমাদেরকে সঠিকভাবে যেমন জানতে হবে তেমনি, কোরবানীর উপযুক্ত একটি ভাল গরু কিভাবে বাছাই করতে হয় সেই ব্যপারেও আমাদের জ্ঞান রাখতে হবে। নিচের দিকনির্দেশনাগুলো সেইসকল মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য যারা এই বছর কোরবানী করার নিয়ত রাখছেন।
আপনার উপর কি কোরবানী ওয়াজিব?
সামর্থ্যবান সকল মুসলিম নারী-পুরুষের উপর কোরবানী ওয়াজিব। কোনো মুসলিম যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে তার উপর কোরবানী ওয়াজিব। ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদ হল, সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপা অথবা সাড়ে সাত তোলা সোনা / সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ অর্থ। বাজারে বর্তমানে সোনা ও রুপার মূল্য কত জেনে নিন। তারপর হিসাব করে দেখুন, আপনার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্ত:ত সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ অর্থ আছে কি না। যদি থাকে তাহলে আপনার উপর কোরবানী ওয়াজিব।
আপনাকে অবশ্যই কোরবানী দিতে হবে। জ্বিলহজ মাসের ১০ তারিখ ফজর থেকে ১২ ই জ্বিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যেও যদি আপনার হাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ চলে আসে, তাহলেও আপনার উপর কোরবানী ওয়াজিব হবে। যদি আপনার কাছে কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা থাকে, যা সর্বমোট মূল্য সাড়ে বাহান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমান হয় তাহলেও আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, বর্তমানে থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না এমন জমি, ভবিষ্যতে বিক্রীর জন্য রেখে দেওয়া জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য কোরবানীর নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আপনার ব্যক্তিগত কোন কোন সম্পদ নিসাবের হিসাবের ক্ষেত্রে ধর্তব্য সেটি প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কোনো আলিমের কাছ থেকে জেনে নিন।
যদি আপনি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক না-ও হন, তাহলেও সওয়াবের আশায় কোরবানী করতে পারবেন।
কোরবানীর পশু কেনায় হালালভাবে আয়কৃত অর্থ ব্যয় করুন
কোরবানী একটি ইবাদত। আর ইবাদত কবুলের প্রধান শর্তই হল হালাল আয়। আপনার কোরবানীর পশু কেনার টাকা অবশ্যই যেন সূদ, ঘুষ বা অন্যকোনও হারাম উৎস থেকে প্রাপ্ত না হয়। হারাম উৎস থেকে প্রাপ্ত টাকায় করা কোরবানী কবুল হবে না। অবশ্যই কোরবানীর পশু কেনার জন্য হালাল অর্থ ব্যয় করতে হবে। পশু কেনার আগে বিষয়টির দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুন।
আপনার নিয়ত হতে হবে আল্লাহকে খুশি করা
কোরবানীর ক্ষেত্রে আপনার নিয়ত হতে হবে শুদ্ধ। আপনার উদ্দেশ্য হবে শুধুই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। লোক দেখানোর জন্য, চড়া দাম দিয়ে বড় আকারের পশু কিনে এলাকায় নিজের নাম জাহির করার জন্য, শুধুমাত্র গোশত খাওয়ার লোভে কোরবানী করা যাবে না।
কোন কোন পশু কোরবানীর উপযুক্ত?
হালাল পশু মানেই কিন্তু কোরবানীর উপযুক্ত পশু নয়। শুধুমাত্র শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কিছু চতু:স্পদ প্রাণী দিয়েই কোরবানী করা যায়৷ গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, উট, দুম্বা দিয়ে কোরবানী করা যাবে৷ এর বাইরে অন্যকোনো পশু দিয়ে কোরবানী করা জায়েজ নেই৷
পশুর বয়স
কোরবানীর ক্ষেত্রে পশুর বয়স অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ন্যুনতম বয়সের চেয়ে কম বয়সী পশু দিয়ে কোরবানী করা জায়েজ নেই। বিভিন্ন পশুর জন্য শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ন্যুনতম বয়সগুলো নিম্নরুপ:
গরু, মহিষ
কোরবানীর জন্য ন্যুনতম ২ বছর বয়সী গরু বা মহিষ প্রয়োজন।
ছাগল
কোরবানীর ছাগলের ন্যুনতম বয়স ১ বছর।
দুম্বা ও ভেড়া
কোরবানীর দুম্বা ও ভেড়ার ন্যুনতম বয়স ১ বছর।
তবে দুম্বা ও ভেড়ার ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম আছে। যদি ছয় মাস বয়সী কোনো ভেড়া বা দুম্বাকে দেখতে ১ বছর বয়সী ভেড়ার/দুম্বার মতই বড়সড় লাগে সেক্ষেত্রে ৬ মাস বয়সী ভেড়া/দুম্বা দিয়ে কোরবানী করাও জায়েজ আছে।
লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, এই নিয়মটি শুধু ভেড়া এবং দুম্বার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, ছাগলের ক্ষেত্রে নয়। ছাগল দেখতে যত বড়ই হোক না কেন, বয়স এক বছর হতেই হবে।
উট
কোরবানীর জন্য উটের বয়স ন্যুনতম ৫ বছর হতে হবে।
পশুর দাঁত
কোরবানীর পশুর বয়স নিয়ে তো জানা গেল, কিন্তু সঠিক বয়সটা নির্ণয় করার উপায় কী? বয়স নির্ণয়ের উপায় হল, পশুর দাঁত দেখা।
গরুর দাঁত দেখে বয়স নির্ণয় করার কৌশল
গরুর দাঁতের সংখ্যা এবং দাঁতের অবস্থা দেখে তার বয়স নির্ণয় করা যায়।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরুর মুখের ভেতরে ৩২টি দাঁত থাকে। বিভিন্ন বয়সে গরুর দাঁতের পরিমাণ ও ধরন নিম্নরুপ:
১ মাস
গরুর জন্মের এক মাসের মধ্যেই দুধদাঁত উঠতে শুরু করে। স্থায়ী দাঁতের থেকে এগুলোকে সহজেই আলাদা করা যায়। দুধদাঁতগুলো আকারে ছোট এবং তুলনামূলকভাবে বেশি সাদা। এক মাসের মধ্যে নিচের পাটির সামনের ৮টি দুধদাঁত উঠে যায়।
১ বছর
এক বছর বয়সে সামনের মাঝের দুটো দুধদাঁত পড়ে যায় ও সেখানে স্থায়ী দুটো দাঁত ওঠে। এই দাঁতগুলোর আকার পাশের দাঁতগুলোর থেকে বড়। দুই বছর বয়সের মাঝে এই দুটো দাঁত বেশ বড় আকার ধারণ করে।মূলত এই বিশেষ দাঁতদুটো দেখলেই বোঝা যায় গরুর বয়স দুই বছর এবং সেটি বয়সের দিক থেকে কোরবানীর উপযুক্ত।
দুই থেকে তিন বছর
দুই বছর থেকে আড়াই বছরের মাঝে সামনের দুটি দাঁতের দুই পাশে আরও একটি করে স্থায়ী দাঁত ওঠে। এভাবে সামনে স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা হয় ৪টি। তিন বছরের মাঝে পাশের দুটি দাঁতও সম্পূর্ণ আকৃতি ধারণ করে।
তিন থেকে পাঁচ বছর
তিন বছরের মাঝে পাশে আরও দুটি দাঁত ওঠে। ফলে সামনে স্থায়ী দাঁতের সংখ্যা হয় ৬টি। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এই দুটি দাঁতও পূর্ণ আকৃতি ধারণ করে। চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সামনের আটটি স্থায়ী দাঁত উঠে যায়।
পাঁচ থেকে ছয় বছর
গরুর বয়স যখন পাঁচ থেকে ছয় বছর, তখন সামনের দুটো দাঁত ক্ষয় হতে হতে সমান হয়ে যায় এবং পাশের বাকি দাঁতগুলোতেও ক্ষয়ের চিহ্ন দেখা যায়। ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁতগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন গরুর বয়স তুলনামূলকভাবে বেশি। গরুর গড় আয়ু ১২ বছর। তবে কিছু কিছু গরু আরও বেশি বছরও বাঁচতে পারে।
গরুটি যদি এমন হয় যে বেশিরভাগ দাঁতই পড়ে গেছে, ঘাস চিবিয়ে খেতেও পারে না, তাহলে সেই গরু কোরবানী করা জায়েজ নেই।
শিংয়ের দিকে খেয়াল করুন
গোড়া থেকে শিং ভেঙে গেছে এমন কোনো পশু কোরবানী দেওয়া যাবে না। তবে শিং ওঠেইনি বা অর্ধেক ভেঙে গেছে, এমন পশু কোরবানীর জন্য গ্রহণযোগ্য।
পশুটি সুস্থ আছে তো?
কোরবানীর জন্য অবশ্যই একটি সুস্থ পশু নির্বাচন করতে হবে৷ অসুস্থ, রোগাক্রান্ত গরু,যেটি কোরবানীর স্থানে হেঁটে যেতে যেতেই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেগুলো কোরবানীর জন্য কেনা যাবে না।
মোটা গরু মানেই ভাল গরু নয়
অনেকে মনে করে, গরু দেখতে মোটাসোটা, নাদুস-নুদুস হলেই সেটা ভাল গরু। কিন্তু এই ধারনা ভুল। বরং গরুটি সুস্থ কি না সেটাই আসল কথা। আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। তাই শুধু গরুর আকার দেখে প্রতারিত হবেন না। বরং গরুর দাঁত ঠিক আছে কি না, গরুটি রোগমুক্ত কি না এগুলো যাচাই করুন।
সুস্থ গরু চেনার উপায়
গরুটি সুস্থ আছে কি না তা বোঝার জন্য গরুর মুখের সামনে কিছু খাবার ধরুন। গরু যদি নিজে থেকে জিব দিয়ে টেনে খাবার খেয়ে নেয় তাহলে বুঝতে পারবেন গরুটি সুস্থ আছে।
অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগকে না বলুন
গরু কম সময়ের মধ্যে মোটাতাজা করার জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে। এই ধরনের গরুর মাংস খাওয়া শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর মাংস খাওয়ার ফলে মোটাতাজাকরণের ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ মানুষের শরীরেও প্রবেশ করে। এতে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হয়। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ মানুষের শরীরে উচ্চ মাত্রায় জমা হয়ে মানুষের বিপাক ক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে। এইসব মোটাতাজা করার ওষুধ খেয়ে শুধু গরুই না, গরুর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষও অতিরিক্ত মোটা হয়ে পড়ছে।
গরুর স্বাস্থ্য ভাল করার জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত এবং স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিতে, চিটাগুড়, ধানের খড়ের সাথে ইউরিয়া মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। এই পদ্ধতিতে ৪ থেকে ৫ মাস সময়ের মধ্যে গরু স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে। কিন্তু কিছু অর্থলোভী ব্যবসায়ীরা ৩ সপ্তাহ থেকে ২ মাসের মধ্যে গরুকে মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে।
অতিরিক্ত মোটাসোটা গরু মানেই সেটি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বড় করা হয়েছে এই সম্ভাবনা অনেক বেশি। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বড় করা গরু এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
ইঞ্জেকশন বা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায়
গরুর শরীরে কিছু লক্ষণ থাকলে মোটামুটিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেটিকে বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন দিয়ে বড় করা হয়েছে। যেমন:
শরীরে আঙুলের দাগ বসে যাওয়া
মেডিসিন খেয়ে বড় হওয়া গরুর শরীরে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে শরীরের ওই স্থানে আঙুলের দাগ বসে যায়। স্থানটি স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বড় হওয়া গরুর ক্ষেত্রে এমনটি হবে না। এর কারন হল, হরমোনের প্রভাবে গরুর শরীরে প্রচুর পানি জমে থাকে। তাই আঙুল দিয়ে চাপ দিলেই দেবে যায়।
অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা
ক্ষতিকর মেডিসিন দিয়ে বড় করা গরু খুব ঘন ঘন নি:শ্বাস ফেলে। অল্প হাঁটাচলা করলেই হাঁপিয়ে ওঠে।
মুখে অনেক বেশি লালা ও ফেনা
এই ধরনের গরুর মুখে লালা বা ফেনার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
নিস্তেজ স্বভাব
স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়া গরু একেবারেই নিস্তেজ স্বভাবের হয়। হাঁটাচলা করতেও কষ্ট হয় এই গরুগুলোর।
নাক ও কুঁজের বৈশিষ্ট্য
সুস্থ গরুর নাক ভেজা ভেজা থাকবে। পিঠের কুজ হবে সুগঠিত। একটা কথা আমরা প্রায়ই শুনি- ‘'চকচক করলেই সোনা হয় না।’’ কথাটা কোরবানীর গরু কিনতে গেলেও মনে রাখা প্রয়োজন। বেশি ফোলা-ফাঁপা শরীর, ওজনের ভারে ঠিকমতো হাঁটতেও কষ্ট হয়, নিস্তেজ স্বভাবের, চকচকে চামড়ার গরু দেখলেই বুঝতে হবে সেটি কৃত্রিম উপায়ে বড় করা। এইসব গরু রেখে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য, সাধারণ ঘাস খেয়ে, খড় খেয়ে বড় হওয়া নীরোগ একটি গরু বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। হোক সেটা দেখতে খুবই সাধারণ।
গর্ভবতী গাভী চলবে না
কোরবানীর জন্য গর্ভবতী গাভী বা অন্যকোনো পশু কেনা যাবে না। গর্ভবতী পশু দিয়ে কুরবানী করা অনেক ওলামায়ে কেরামগনের মতে হারাম। যদি এমন হয় যে, বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিল না যে পশুটি গর্ভবতী, কিন্তু কোরবানী করার পর দেখা গেল পশুটির পেটে বাচ্চা, তাহলে কোরবানী সহিহ হবে। এক্ষেত্রে, নিয়ম হচ্ছে- বাচ্চাটিকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেলে তাকেও আল্লাহর নামে কোরবানী করে দিতে হবে। আর বাচ্চাটি যদি গর্ভে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তাহলে তার মাংস খাওয়া জায়েজ হবে না।
গাভী গর্ভবতী কি না বুঝবেন কীভাবে?
গাভী গর্ভবতী হবার কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন-
- গাভীর পেট ও ওলান আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাওয়া।
- শরীরে চর্বি জমে শরীর ভারী হয়ে যাওয়া।
- গাভীর চালচলন ধীর হয়ে যাওয়া।
- বেশি মোটাসোটা হয়ে যাওয়া।
- চার-পাঁচ মাসের মধ্যে পেটের বাচ্চার নড়াচড়া বোঝা যায়।
এইসব লক্ষণ দেখলে সেই গাভীকে কোরবানীর হাটে বিক্রীর জন্য আনা অনুচিত।
লেজের দিকেও লক্ষ্য করুন
কোরবানীর পশুর লেজের দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন। লেজকাটা পশু দিয়ে কোরবানী হবে না।
চোখ, পা, শিং এবং অন্যান্য
অন্ধ, রোগাক্রান্ত, পঙ্গু, আহত গরু কোরবানী করা জায়েজ নেই। গরুর দুটি চোখই ভাল থাকতে হবে।
কোরবানীর গরুর চারটি পা-ই সুস্থ-স্বাভাবিক থাকতে হবে। তিন পায়ে চলে, বাকি এক পা মাটিতে রাখতে পারে না; এমন পশু কোরবানী করা যাবে না।
পুরোপুরি বা অর্ধেক কান কাটা পশুও কোরবানীর অনুপযুক্ত। তবে কান জন্ম থেকেই ছোট এরকম পশু কোরবানী দেওয়া যাবে।
কোরবানীর গরু কিনতে অবশ্যই অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নিয়ে যাওয়া উচিত। আজকাল হাটের ভীড় এড়াতে অনেকে সরাসরি খামারে গিয়েও গরু কিনছেন৷ হাট বা খামার যেখান থেকেই কিনুন না কেন উপরে উল্লেখিত বিষয়সমূহ আপনাকে খেয়াল করতে হবে।
কোরবানীর পশু কেনার পর অবশ্যই পশুটিকে আপনার বাসা পর্যন্ত নিরাপদে ট্রাকের মাধ্যমে নিয়ে যেতে হবে। খেয়াল রাখবেন, যেতে যেতে যেন পশুটি আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। অনেক দেখেশুনে কেনার পরও যদি পশুটির শরীরে এমন কোনো ত্রুটি দেখা যায় যার কারনে কোরবানী কবুল হয় না, তাহলে সেই পশুটির বদলে অন্যকোনো পশু কোরবানী করতে হবে।
পশু জবেহ এবং মাংস বিতরণে সতর্ক থাকুন
আপনি সকল নিয়ম কানুন মেনে পশু কিনলেই কিন্ত সব দায়ীত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং, দায়ীত্ব কেবল শুরু হয়। পশু কেনার পর তাকে অবশ্যই যত্নের সাথে রাখতে হবে। নিয়মিত খাবার ও পানি খাওয়াতে হবে। পশুর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা যাবে না। কোরবানীর পশু জবেহ করার সময় এক পশুর সামনে অন্য পশুকে জবেহ করা, পশুর সামনেই ছুরিতে শান দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়।
জবেহ এবং মাংস বিতরণের ক্ষেত্রে শরিয়তের সকল বিধিনিষেধ অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করতে হবে। একটু ভুলের জন্য আপনার কোরবানী কবুল না হবার আশংকা থাকে। তাই কোরবানীর পশু জবেহ এবং বিতরণের সাথে সম্পর্কিত সকল মাসআলা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। জবেহ এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হল কোরবানীদাতা নিজের হাতে পশুটি জবেহ করা। যদি কোরবানীদাতা নিজে এই কাজে পারদর্শী না হন, তাহলে অন্যকাউকে দিয়ে করানো যেতে পারে। তবে যিনি করবেন তিনি যেন অবশ্যই একজন মুসলমান হন এবং কোরবানীর সকল নিয়মকানুন ভালভাবে জানেন এবং মেনে চলেন। কোরবানীর সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু সুন্নত এবং ওয়াজিব রয়েছে। যেমন-
- ৯ ই জ্বিলহজের ফরজ থেকে ১৩ ই জ্বিলহজের আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব।
- যিনি কোরবানী করবেন তার জন্য জ্বিলহজ মাসের ১ তারিখ থেকে কুরবানীর আগ পর্যন্ত চুল বা নখ কাটা হারাম।
- যিনি কোরবানী করবেন, তার জন্য কোরবানীর পর কোরবানীর গোশত দিয়ে দিনের প্রথম আহার করা সুন্নত।
কোরবানীর অর্থ হল, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করা। আপনার কোরবানী করা পশুর মাংসে দুস্থদের হক আছে। কোরবানীর মাংস তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজেদের জন্য রাখা, এক ভাগ আত্মীয় স্বজনদের দেওয়া এবং আরেক ভাগ দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা সুন্নত। কোরবানীর মাংস পরিবহণ ও বিতরণের কাজকে সহজ করতে আপনার পাশে আছে Lalamove। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে নির্ভুলভাবে কোরবানী করার তৌফিক দান করুক।