বৃষ্টির দিনে হোম শিফটিং-এর প্রয়োজনীয় টিপস

featured image

বাসা বদলের দিনে বৃষ্টি যেকোনো মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিবে। এমনকি, সবচেয়ে গোছানো ব্যক্তির জন্যও এটি কষ্টকর। পিচবোর্ডের বক্সগুলো ভিজে যাচ্ছে, আসবাবপত্রে আর্দ্রতা এবং স্যাঁতসেঁতে অবস্থা- মুভারদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করবে। কিন্তু ভয় নেই! একটু প্ল্যানিং এবং কিছু কৌশলের মাধ্যমে, আপনি সহজেই বৃষ্টির দিনে হোম শিফট করতে পারবেন। আর আপনার জিনিসপত্রও নিরাপদ ও শুকনো রাখতে পারবেন।

আজকের আর্টিকেলে বৃষ্টিতে নিরাপদে হোম শিফটিং এর উপায়, নিজেকে প্রস্তুত করা, প্যাকিং টিপস, ট্রাকের ধরন ইত্যাদি আলোচনা করবো। এই নিয়মগুলো মেনে চললে, মানসিক চাপ ছাড়া নিরাপদে হোম শিফটিং করতে পারবেন। 

 

পূর্ব পরিকল্পনা

বাসা শিফটের প্রথম ধাপই হলো একটি গোছানো এবং বিস্তারিত পূর্ব পরিকল্পনা। বিশেষ করে, বর্ষার সময় একটি নিখুঁত পরিকল্পনা আপনাকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিবে। আর আপনার কাজ সফল করবে। 

 

আবহাওয়ার পূর্বাভাস

আপনার প্রথম কাজই হবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে চোখ রাখা। নিয়মিত স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস চেক করার মাধ্যমে, বৃষ্টি হবে না এমন একটি দিন আপনি বাছাই করতে পারবেন। চাইলে, আগে থেকে ঠিক করে রাখা দিনও স্থগিত করতে পারেন। অথবা একটি ব্যাকআপ তারিখ ভেবে রাখতে পারেন। সবকিছু ঠিক করতে হবে স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাসের উপর নজর রেখে। এভাবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় চলাফেরার ঝুঁকি এবং অসুবিধাগুলো কমিয়ে আনতে পারেন। তাই, বাসা বদলের জন্য সেরা দিনটি বেছে নিতে প্রথমে আবহাওয়া বিবেচনা করুন।

উপযুক্ত দিন বাছাই

বর্ষা ঋতুতে বাসা পরিবর্তন এমনিতেই কেউ সহজে করতে চায় না। তাই, একটি উপযুক্ত দিন বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বৃষ্টির পূর্বাভাস না থাকলে বা বৃষ্টির সামান্য সম্ভাবনা থাকতে পারে, এমন একটি দিন বাসা পরিবর্তনের জন্য বেছে নিন। অবিরাম বৃষ্টিতে কাজ করা কঠিন। তবে যদি হালকা বৃষ্টি হয়, আপনি ট্রাকে বক্স লোড করা শুরু করার আগে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারেন। এর মধ্যে বাকি প্যাকিং সম্পূর্ণ করতে পারেন। বৃষ্টি থামার পর আপনার সমস্ত জিনিসপত্র ট্রাকে লোড করতে পারেন৷

 

উপযুক্ত পরিবহণ নির্বাচন 

দুই ধরনের ট্রাক বাছাই করতে পারেন: ওপেন বডি ট্রাক এবং ইনক্লোজড ট্রাক যা কখনও কখনও কভার ভ্যান নামে পরিচিত। আপনার আসবাবপত্র এবং জিনিসের আকার এবং ট্রাকের দৈর্ঘ্যের পরিসরের উপর ভিত্তি করে, উপযুক্ত গাড়িটি নির্বাচন করুন। 

১ টন ট্রাক

এই ধরনের ট্রাকের আকার ১৮৮ × ১৩৩ × ১০৮ সে.মি.। বাসা বদলের পণ্য ডেলিভারি, বড় যন্ত্রপাতি এবং ইলেকট্রনিক্স  যন্ত্রপাতি পরিবহণের জন্য এই ট্রাকগুলো ব্যবহার করা হয়। এটি সর্বোচ্চ ৮০০ কেজি পর্যন্ত মালামাল বহন করা যাবে। 

 

২ টন ট্রাক

এই ট্রাকগুলোর আকার ৩৭০ × ১৯০ × ২১০ সে.মি.। এই ট্রাকগুলোর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২০০০ কেজি পর্যন্ত পণ্য বহন করা যাবে। 

 

১ টন কাভার্ড ভ্যান

রোদ কিংবা বৃষ্টিতে নিরাপদে বাসা শিফটের জন্য সবচেয়ে ভালো হল ১ টন কাভার্ড ভ্যান । এদের আকার ১৮৮ × ১৩৩ × ১০৮ সে.মি.। সর্বোচ্চ ৮০০ কেজি পর্যন্ত পণ্য বহন করা যাবে।  

যদি ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে ট্রাক খুঁজে পাওয়া ঝামেলা বলে মনে হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় Lalamove ডাউনলোড করুন এবং সহজে ট্রাক ভাড়া নিন।

 

সঠিক সময়ে মুভার বুক 

মালামাল লোড-আনলোড করার জন্য ভালো সার্ভিস খুঁজে পাওয়া ঢাকায় কঠিন কাজ। টঙ্গী, সাভার, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার মধ্যাঞ্চলের মতো জায়গায় মুভার্স পাওয়ার সমস্যা শহরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি। আবার বর্ষায় এটি প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। বৃষ্টির জন্য অতিরিক্ত চার্জও চাইতে পারে।

তাই এসব ঝামেলা এড়াতে, আগে থেকেই মুভিং সার্ভিস ঠিক করুন এবং চার্জ নিয়ে আলোচনা করুন। অনিশ্চিত আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো অতিরিক্ত চার্জ যাতে দিতে না হয়, সে বিষয়ে স্পষ্ট যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন। এসব কিছুই পাওয়া যাবে লালমুভ অ্যাপে!  

 

প্যাকিং

ভালো মানের বক্স ব্যবহার

উচ্চ-মানের, নতুন বক্স কিনুন । পুরানো বক্সগুলো নরম হয়ে ছিড়ে বা ভেঙ্গে যেতে পারে। তাছাড়া আর্দ্রতা ক্ষতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। দামি আর ভঙ্গুর আইটেমগুলোর জন্য ডাবল-বক্সিং এবং অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য প্লাস্টিকের চাদর বা ব্যাগ ব্যবহার করুন। আপনি প্যাক করা প্রতিটি আইটেমের জন্য প্যাকেজিং উপকরণ যেমন বাবল র‍্যাপ, প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং জিপ লক ব্যাগ বেছে নিন। 

 

পরিষ্কারের সামগ্রী প্যাক করা এড়িয়ে চলুন

বর্ষার দিনে হোম শিফটিং-এ প্রথমে যা করতে হবে তা হল ঝাড়ু, মোপস, পুরানো তোয়ালে, ফ্লোর ক্লিনার এবং কয়েকটি আবর্জনা ফেলার ব্যাগগুলোর মতো মূল পরিষ্কারের পণ্যগুলোকে একপাশে রাখা। এই কয়েকটি আইটেম একবারে শেষের দিকে প্যাক করা উচিত। কর্দমাক্ত পায়ের ছাপ এবং ধুলাবালি এড়াতে প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সাথে কিছু তোয়ালে বা কাপড় রাখুন কোনো আইটেম শুকানোর জন্য বা মোছার জন্য। 

আপনি নতুন বাসার প্রবেশপথ এবং সামনের অংশে পুরানো তোয়ালে বা চাদর দিয়ে রাখুন। ফলে ভিতরে যাওয়ার সময় জুতা থেকে কাদা বা পানি পড়লে, নতুন বাসা ময়লা হবে না। এবং আপনাকে পিছলে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।

 

মূল্যবান জিনিসের নিরাপত্তা

আসবাবপত্র: বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে আসবাবপত্রের কভার, কম্বল বা পুরানো চাদর ব্যবহার করুন।

ইলেকট্রনিক্স: ইলেকট্রনিক্স এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোকে প্লাস্টিকের মোড়কের কয়েকটি স্তরে মুড়ে দিন বা সিল করা প্লাস্টিকের বিন ব্যবহার করুন।

আর্ট: শিল্পকর্মের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। প্রতিটি শিল্পকর্ম অ্যাসিড মুক্ত টিস্যু পেপারে মুড়ে তারপর প্লাস্টিকের মোড়ক দিয়ে প্যাক করুন। 

প্রয়োজনীয় জিনিস নিরাপদে রাখুন: আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যেমন আপনার আইডি প্রুফ, ব্যাংকের কাগজপত্র ইত্যাদি ওয়াটারপ্রুফ বা জিপ লক ব্যাগে রাখুন। ইলেকট্রনিক্স আইটেমের ব্যাটারি ফুরিয়ে যেতে পারে, তাই সাথে একটি পাওয়ার ব্যাংক রাখা নিশ্চিত করুন। 

সঠিক পোশাক পরিধান 

বৃষ্টিতে চলাফেরা করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এতে পিছলে পড়ার এবং নিজেকে আহত করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই প্রয়োজনীয় রেইন গিয়ার  এবং সঠিক পোশাক দিয়ে ঝুঁকি কমান।

  • রেইনকোট এবং বুট
  • ছাতা
  • ওয়াটারপ্রুফ ক্যাপ 
  • অতিরিক্ত জামাকাপড়

শুষ্ক স্থানে লোড এবং আনলোড

লোড এবং আনলোড করা একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। বৃষ্টি এই কাজটিকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারে। সুতরাং, একটি শুষ্ক স্থানে আইটেম লোড এবং আনলোড নিশ্চিত করুন। চাইলে তাবু, বাড়ির গ্যারেজ বা পরিচিত কারো সাহায্য নিতে পারেন। 

রাস্তা চেক 

বৃষ্টিতে যেকোনো জায়গায় কম সময়েই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। আবার, ট্রাফিক জ্যামের সমস্যাও রয়েছে। তাছাড়া, আপনি নতুন বাড়িতে যাওয়ার রাস্তার সাথে খুব বেশি পরিচিত নাও হতে পারেন। তাই আগেই রাস্তার অবস্থা চেক করুন। সাথে একটি ব্যাকআপ রাস্তার কথাও ভেবে রাখুন। মুভারদের সাথে পরামর্শ করে এই কাজটি সহজ করে নিন। 

প্রতিকূল আবহাওয়ায় কাজ অবশ্য ধীরগতিতে চলে যাবে এবং বেশি সময় লাগবে। প্রবল বৃষ্টিপাতের মধ্যে মুভারদের সাময়িকভাবে থামতে হতে পারে, ট্র্যাফিক ধীর হতে পারে এবং প্যাকিংয়ে আরও মনোযোগ দিতে হবে। আবহাওয়ার প্রভাব কমাতে যতটা সম্ভব আগে থেকে পরিকল্পনা করুন। গাড়ি চালানোয় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন। মুভাররা আপনার জন্য সেরা কাজ করতে চায়, তাই তাদের পরামর্শ নিন।

বৃষ্টির মধ্যে হোম শিফটিং চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি দূরে কোথাও যান। তবে, আপনার সঠিক পরিকল্পনা এবং বৃষ্টিতে বাসা বদলের কয়েকটি নিরাপত্তা টিপস মেনে ঝুঁকি এবং অসুবিধাগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমাতে পারেন। আশা করি, বৃষ্টির দিনগুলোতেও আপনার বাসা বদলের এই প্রক্রিয়া সহজ ও ঝামেলামুক্ত হবে। 

Read more