ই-কমার্স চালু করার আগে জেনে রাখুন এই বিষয়গুলো

ইন্টারনেটের এই অবিশ্বাস্য উত্থানের সময়ে দাঁড়িয়ে আপনার মাথায় একটা দারুণ বিজনেস আইডিয়া ক্লিক করতেই পারে। ইন্টারনেটে ঢুকলেই যখন পেয়ে যাচ্ছেন সকল কিছু- শাড়ি থেকে হাড়ি, কম্পিউটার থেকে রাইস প্ল্যাটার, বই থেকে মই, মাছ থেকে গাছ কিংবা ফোন থেকে লোন- সবই এখন এক ক্লিকের ব্যাপার। গ্রোসারি আইটেম কিনতেও মানুষ এখন বাজারে যাচ্ছে না, অর্ডার করছে ঘরে বসেই। ইন্টারনেটের এই বিস্ময়কর উত্থানে একটি ই-কমার্স সাইট চালু করার একটা দুর্দান্ত প্ল্যান আপনার মাথায় যদি চলেই আসে, সেই প্ল্যান তো আর বসিয়ে রাখার দরকার নেই। কাজ শুরু করে দিন এবং আস্তে আস্তে হয়ে উঠতেই পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা। কিন্তু যেকোনো কিছু শুরু করার আগেই তো সে সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জেনে শুনে শুরু করা ভালো। ই-কমার্স নিয়ে প্ল্যান শুরু করার আগেও এ সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা দরকার, চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক, ই-কমার্সে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখা খুবই জরুরি।
১। পরিকল্পনা ও বাজার গবেষণা:
ই-কমার্স শুরুর আগে প্রথমেই দরকার একটা ঠিকঠাক পরিকল্পনা। ভালো পরিকল্পনা আপনার ব্যবসার ভিত্তি গড়ে দিবে দারুণভাবে। ইন্টারনেটে এখন সকল ধরনের পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে, আপনার সার্ভিসে এক্সট্রা কী থাকবে, যার জন্য আপনার সাইটে ক্রেতারা ঢুকবে, সেটা বের করে রাখা দরকার। আপনার সার্ভিসে এমন কিছু থাকা অত্যন্ত জরুরি, যা আপনার সার্ভিসকে আলাদা করবে বাকি সবার থেকে, তবেই তো আপনার সার্ভিস আলাদা করে নজরে পড়বে সবার। সে পরিকল্পনা করে ই-কমার্সে আস্তে ধীরে আগানো ভালো। যে পণ্য বা সেবা নিয়ে কাজ করবেন, তার বাজার সম্পর্কেও আইডিয়া করে রাখতে হবে। চাহিদা কেমন সে পণ্যের, প্রতিযোগী কারা, বর্তমানে মূল্য কেমন, আপনি কেমন মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন- সকল কিছু নিয়ে একটা পারফেক্ট প্ল্যান আপনাকে এগিয়ে রাখবে অনেকদূর।
আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা হবে, তাদের বয়স, অবস্থান, কেন তারা আপনার পণ্য নিয়ে আগ্রহী হবে- এসব কিছু নিয়ে আপনার পরিকল্পনা, আপনার পণ্যকে কীভাবে আপনি প্লেস করতে চান বাজারে, এগুলো নিয়েও প্রপার প্ল্যান থাকাটা জরুরি।
২. ব্যবসা পরিকল্পনা ও ইনভেস্টমেন্ট:
এবার আসে ব্যবসা পরিকল্পনা, কীভাবে আপনি এগিয়ে যাবেন আপনার ব্যবসার পথ ধরে, তা বের করে ফেলুন। এর সাথেই আসে ইনভেস্টমেন্টের প্রসঙ্গ। আপনার মাসিক খরচ কত হবে, কোন কোন খাতে খরচ করতে হবে, এগুলো নিয়ে আপনার প্ল্যান থাকাটা জরুরি। ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে আপনি কি একাই থাকবেন, নাকি আপনার সাথে কোনো কো ফাউন্ডার থাকবে, সেটাও ভেবে বের করে ফেলুন আগেই। মাসিক খরচের হিসাব করতে পারলে আপনি একটা হিসাবে যেতে পারবেন, কত খরচ আপনার হচ্ছে এবং কত বিক্রি আপনার করতে হবে তার জন্য। যদি কাল থেকেই আপনার ই-কমার্স চালু হয়ে যায় জাদুবলে, তাহলে প্রথম মাসে কত খরচ হতে পারে ব্যবসার জন্য, এই হিসাবটা করে ফেলা জরুরি।
৩. ওয়েবসাইট তৈরি:
পূর্ব-প্রস্তুতি শেষ হলে নজর দিতে হবে আধুনিক ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির দিকে। বর্তমানে অনেক ডেভেলপমেন্ট স্টার্ট-আপ কোম্পানি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার সার্ভিস দিয়ে থাকে। আপনি সেগুলো থেকে সার্ভিস নিয়ে অথবা পার্সোনাল ডেভেলপার হায়ার করে ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন। সঠিক প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এগিয়ে গিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য জরুরি। ওয়েবসাইট দিয়েই আপনার পণ্য বা সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছুবে। ওয়েবসাইট ছাড়াও শুধু ফেসবুক ইউজ করেও অনেক ব্যবসা পরিচালিত হয়, যেগুলোকে আমরা এফ-কমার্স বলে জানি। এভাবে সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করতে পারা জরুরি। ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে, এর চেহারা কেমন হবে, কীভাবে গ্রাহক আপনার সেবা ব্যবসার করবে- এই সব কিছুর উপর নির্ভর করবে আপনার ওয়েবসাইটের লুক অ্যান্ড ফিল। ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি কেমন, তা নিয়েও কাজ করতে হবে। পাশাপাশি খুব গুরুত্বপূর্ণ পেমেন্ট গেটওয়ে ঠিক করা। পেমেন্ট গেটওয়ে নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তাদের কাছ থেকে সিকিউরড পেমেন্ট গেটওয়ে নির্বাচন করা জরুরি।
৪. সঠিক ডেলিভারি সিস্টেম:
গ্রাহক আপনার পণ্য অর্ডার করার পরে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে কীভাবে গ্রাহক সহজে তাদের পণ্য হাতে পাবে। এর জন্য দরকার একটি দ্রুত ও আধুনিক ডেলিভারি সার্ভিস। এক্ষেত্রে আপনার সাথী হতে পারে দেশের অন ডিমান্ড ডেলিভারি সার্ভিস Lalamove. Lalamove-এর আধুনিক ফিচার, ট্র্যাকিং সার্ভিস, অভিজ্ঞ ড্রাইভার, বিশ্বস্ত কাস্টমার সার্ভিসসহ অনেক কিছুই। এছাড়াও এখানে আছে মাল্টি স্টপ ডেলিভারি সিস্টেম, যা আপনার খরচ ও সময় বাঁচাবে। মাল্টি স্টপ ডেলিভারি সার্ভিস নিয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করে পড়ে নিন এই লেখাটি- https://www.lalamove.com/bn/blog/multistop-delivery
৫। আইনি কাজঃ
ট্রেড লাইসেন্স, ব্যবসায়িক বৈধতা সার্টিফিকেটসহ যা যা প্রয়োজন বৈধ ভাবে ব্যবসা করার জন্য, তার সবকিছু রেডি রেখে ব্যবসা শুরু করুন। কোনোভাবেই যেন আপনার ব্যবসার আইনি কাজ ও ডকুমেন্টস বৈধ নীতিমালা ভঙ্গ না করে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন।
৫. বিজ্ঞাপন:
কথায় বলে, বিজ্ঞাপন ছাড়া ব্যবসা করা আর অন্ধকারে সুন্দরি কারো দিকে ত্যাকিয়ে মুচকি হাসা সমান। তাই, গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে হবে আপনাকেই। এখন সোশ্যাল মিডিয়া অনেক জনপ্রিয়, সোশ্যাল মিডিয়া ইউজ করে আপনি গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন, তাদের জানাতে পারবেন আপনার সার্ভিস সম্পর্কে। এক্সপার্ট কোনো বিজ্ঞাপনী সংস্থা আপনার সার্ভিসকে নিয়ে যেতে পারে অনেকদূর। এছাড়াও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) করে আপনার ওয়েবসাইটকে রাখতে পারবেন সার্চ ইঞ্জিনে সবার আগে। ইমেইল মার্কেটিং এবং পেইড অ্যাডভার্টাইজিং করেও আপনার ব্যবসাকে এগিয়ে রাখতে পারবেন প্রতিযোগীদের থেকেই।
৬. গ্রাহক সেবা:
বিশ্বস্ত ও আধুনিক কাস্টমার কেয়ার ইদানীং খুবই জরুরি। গ্রাহকের যেকোনো সময় যেকোনো প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সেটার জন্য গ্রাহক যোগাযোগ করবে আপনার কাস্টমার সার্ভিসে, ভালো কাস্টমার সার্ভিস কাস্টমার স্যাটিসফেকশনের জন্য জরুরি।
কাজী নজরুল ইসলাম অনেকদিন আগে বলেছিলেন, ‘বিশ্বজগৎ দেখবো আমি আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।‘ বিশ্বজগৎ আপন হাতে নিয়ে দেখার সে কল্পবাক্য আজ কিন্তু সম্ভব হয়ে গেছে , এবং তা সম্ভব করেছে মোবাইল ফোন, যাকে বাংলায় বলা হচ্ছে মুঠোফোন। ইন্টারনেটের কল্যাণে মুঠোফোন এখন পুরো বিশ্বজগতকেই হাজির করেছে আমাদের মুঠোয়। তাই এমন অবিশ্বাস্য সময়ে আপনিও আপনার মতো করে প্ল্যান শুরু করতেই পারেন আপনার ই-কমার্সের, আপনার জন্য রইলো শুভকামনা!