কম খরচে ঘর সাজানোর কয়েকটি উপায়

featured image

সাজানো-গোছানো সুন্দর ঘরবাড়ি কে না চায়?

সারাদিন আপনি বাইরে যত ব্যস্তই থাকুন না কেন দিনশেষে নিজের বাড়িতেই আবার ফিরে আসতে হয়। নিজের ঘর, নিজেই বাড়িই আমাদের শেষ ঠিকানা। ঘরবাড়ি সাজানো-গোছানো থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে, কাজে ভালোভাবে মন বসে। আপনার বাড়ি-ঘর সুন্দরভাবে সাজানো থাকলে তা সবার সামনে আপনার সুরূচির পরিচয় তুলে ধরে।

এখনকার যুগে শুধু আত্মীয় আর বন্ধুরাই নয়, অল্প পরিচিত কিংবা অপরিচিতরাও আপনার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঝলক দেখতে পান প্রায়শই। ধরা যাক, আপনি আপনার পেশাগত জীবনের কাজের অংশ হিসেবে একটি অনলাইন মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। দেশ-বিদেশের আরও অনেকেই সেই মিটিংয়ে উপস্থিত। এই অবস্থায় আপনার পেছনে যদি তাঁরা অগোছালো আসবাব আর কাপড়ের স্তুপ দেখতে পান তাহলে  আপনার সম্পর্কে কী ভাববেন? অপরদিকে তাঁরা যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি সাজানো সুন্দর ঘর দেখতে পান, আপনার সম্পর্কে তাদের ধারণা আরও উচ্চ পর্যায়ে পৌছে যাবে।

ঘর সাজানোর জন্য যে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন তা কিন্তু নয়। প্রয়োজন একটি সৃষ্টিশীল মন, প্রতিদিন একটু সময় বের করে কিছু কাজ করা আর সবসময় যত্নশীল থাকা।  আজ থাকছে কম খরচে ঘর সাজানোর কয়েকটি উপায়। 

 

ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন

ঘর সাজানোর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা  আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাসার ফ্লোরগুলো প্রতিদিন ঝাড়ু দেওয়া, মোছা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে বাসায় ধুলাবালি জমতে পারে না, ঘরগুলো অনেকটাই ক্ষতিকর রোগজীবাণু থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হয়। মেঝে ছাড়াও বাসার দরজা,জানালা, দেয়াল ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সিলিংয়ে জমে ওঠা ঝুল,মাকড়সার জাল ইত্যাদি রুটিনমাফিক  ফেলে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ফ্যান এবং এসির দিকেও। ফ্যান ও এসির গায়ে জমে ওঠা ময়লা নিয়মিত  পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আজকাল সিলিং ফ্যানগুলোকে নোংরা-ময়লা থেকে মুক্ত রাখতে ফ্যান কভার পাওয়া যায়। প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।  

 বাসার বাথরুম নিয়মিত টয়লেট ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।  বাথরুমের মেঝে, টয়লেট সিট, বেসিন, কল, টয়লেট পেপার হোল্ডারসহ সকল ফিক্সচারগুলো প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল, ব্রাশ ইত্যাদি ব্যবহার করে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। 

বিছানাগুলো ঘুমোতে যাবার আগে এবং ঘুম থেকে ওঠার পর একবার ঝাড়ু দেওয়া প্রয়োজন। বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কাঁথা ইত্যাদি নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।  এছাড়াও অন্যান্য ফার্নিচারের গায়ে জমে ওঠা ধুলোবালি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বুকশেলফ এবং শেলফে রাখা  বইগুলোর গায়ে জমে থাকা ধুলো, দেয়ালে ঝুলানো শো-পিস ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী টিভিটাও কিন্তু ঘরের চেহারার একটি  গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টিভির স্ক্রিনটাও নিয়মিত মুছে রাখতে হবে। আপনার বাড়িতে যদি ল্যাম্পশেড, অ্যাকুরিয়াম বা এধরনের কোনো ডেকোরেশন পিস থাকে সেগুলোকেও পরিষ্কার রাখা জরুরী। অ্যাকুরিয়ামের পানি নিয়মিত বদলাতে হবে। ময়লা পানি শুধু দেখতেই কুৎসিত নয়, মাছগুলোর জন্যও বিপজ্জনক। কোনো ইনডোর প্ল্যান্ট থাকলে সেগুলোরও নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন।     

 

ঘর গোছানো

ঘর সাজানোর পূর্বশর্তই হচ্ছে ঘর গোছানো। আপনি ঘর সাজানোর জন্য যত দামি ফার্নিচার, যত এক্সক্লুসিভ ডেকোরেশন পিসই ব্যবহার করেন না কেন, গুছিয়ে না রাখলে সেগুলোর কোনো সৌন্দর্য্যই থাকবে না। তাই বিছানা, টেবিল, সোফা ইত্যাদি সবসময় গুছিয়ে রাখুন। বিছানার চাদর, কাঁথা ইত্যাদি যেন এলোমেলো না হয়ে থাকে। পড়াশোনার পর বইগুলো সব গুছিয়ে যথাস্থানে রাখার অভ্যাস করুন। তা না হলে আপনার ঘর দেখতে অগোছালো তো লাগবেই, প্রয়োজনের সময় দরকারী বই-খাতা আপনি হাতের কাছে পাবেন না। কাপড়চোপড় এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে দেখতে খারাপ লাগে। কাপড় ভাঁজ করে আলমারিতে বা আলনায় গুছিয়ে রাখুন।  ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল ইত্যাদির ক্ষেত্রেও গোছগাছের একই নিয়ম মেনে চলতে হবে।  ঘর ছোট হলেও যদি সবকিছু পরিপাটিভাবে গোছানো থাকে তাহলে দেখতে সুন্দর লাগে। আবার অনেক বড় ঘর, দামি আসবাবপত্র থাকার পরেও যদি দেখা যায় বিছানা, টেবিল ইত্যাদি ওলট-পালট, চাদর, বালিশের কভারে ময়লা চিটচিট করছে,  জিনিসপত্র বিভিন্ন দিক থেকে উপচে পড়ছে তাহলে ওসব দামি আসবাবপত্র থাকাই বৃথা।  

ঘর গোছানোর কাজটি আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে যদি আপনার বাড়িতে কোনো বাচ্চা থাকে। বাচ্চার খেলনা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং গোছাতে হবে। খেলনাপাতি এলোমেলো হয়ে থাকলে শুধু ঘরের চেহারাই খারাপ দেখায় না, পায়ের তলায় লিগো কিংবা মার্বেলের মত ছোট ছোট জিনিস পড়ে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

নিজের শখকে কাজে লাগান

ধরা যাক আপনি চাইছেন আপনার ঘরের একটি দেয়ালকে সুন্দরভাবে সাজাতে। কিন্তু কী দিয়ে সাজাবেন ভেবে পাচ্ছেন না।  আপনি ছবি আঁকতে ভালোবাসেন? ব্যস! তাহলে তো হয়েই গেল। আজই এঁকে ফেলুন সুন্দর একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য, ফুল কিংবা নিজের পছন্দের যেকোনো ছবি অথবা নকশা।  নিজের আঁকা ছবি দিয়েই দেয়ালটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে ছবি বাঁধাই করতে পারেন। একটা বাঁধাই করা পেইন্টিং বা ওয়ালম্যাট কিনতে আপনার যে টাকা খরচ হতো, তা কিন্তু বেঁচে গেল। শুধু আঁকা ছবিই না, আপনি যদি ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী হন তাহলে আপনার ক্যামেরায়  তোলা সূর্যাস্তের দৃশ্য, সাগরপাড়ের সৌন্দর্য্য বা প্রিয় অন্য যেকোনো ছবিই হয়ে উঠতে পারে আপনার ঘর সাজানোর উপকরণ। আজকাল ইন্টারনেটেও কপিরাইট ফ্রি অনেক পেইন্টিং পাওয়া যায়। সেগুলো উন্নতমানের কাগজে কালার  প্রিন্ট করে ফ্রেমে বাঁধাই করে ব্যবহার করাও সম্ভব।  

যদি উপরের কোনোটিই আপনার পক্ষে করা সম্ভব না হয়ে থাকে, তাহলে আশেপাশের কোনো হস্তশিল্পের দোকান থেকে স্বল্পমুল্যে পছন্দমতো কিছু ছবি কিনে নিতে পারেন। 

শুধু ছবি আঁকাই নয়, আপনি যদি ক্রাফটিংয়ে আগ্রহি হন সেক্ষেত্রেও শখ করে আপনার নিজের হাতে  তৈরী করা জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। এক্ষেত্রে ‘বেস্ট অফ ওয়েইস্ট’ অর্থ্যাৎ, পরিত্যাক্ত কাঁচামাল ব্যবহার করে আবার ব্যবহারের যোগ্য কোনো জিনিস তৈরীর ধারণা কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন, আপনার বাসায় হয়তো আচার বা জেলি খাওয়া হয়। সেই আচার বা জেলির খালি জারটিকে রং করে বা রং ছাড়াই পুরোনো লেইস, পুঁতি , দড়ি ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে তৈরী করতে পারেন একটি ডেকোরেশন পিস। জারের ভেতর ছোট ছোট ইলেক্ট্রনিক ক্যান্ডেল দিয়ে জার লাইটও তৈরী করা যায়। এরকম পরিত্যাক্ত বা পুরোনো আরও অনেককিছুকেই নতুনভাবে কাজে লাগিয়ে ঘর সাজানো সম্ভব। যেমন কোল্ড ড্রিংক্সের প্লাটিকের বোতল, কাঁচের চুড়ি, পুরোনো কাগজ, বাজারের ব্যাগ, প্যাকিং বাক্স,  দইয়ের পাত্র ইত্যাদি আরও অনেককিছু। পুরোনো কাপড় জোড়া দিয়ে প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমেও তৈরী করে নিতে পারেন ঘর সাজানোর জন্য রংবাহারি পর্দা কিংবা ওয়ালম্যাট। যদি ভাল সেলাই বা জানেন তাহলে তো কোনো কথাই নেই! বেডকভার, টেবিলক্লথ,ওয়ালম্যাট থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনেককিছুই আপনি তৈরী করে নিতে পারবেন।   ইন্টারনেটে বিভিন্ন  টিউটোরিয়াল দেখে হাতের কাছে থাকা নানারকম উপকরণ দিয়ে আপনিও অনেককিছু বানিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। এতে কম খরচে ঘর সুন্দর লাগবে এবং আপনার মনও ভাল থাকবে। একেবারে এক ঢিলে দুই পাখি! 

 

উৎপাদনকারীর কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনুন

আপনি হয়তো বাসার একটি জানালার জন্য সুন্দর একটি ব্লক প্রিন্টের পর্দা কিংবা বিছানার জন্য হ্যান্ডপেইন্ট করা একটি চাদর কিনতে চান। আপনি এই পণ্যগুলো বাজারে গিয়ে কিনতে গেলে আপনার বেশকিছু টাকা খরচ হবে। আজকার ঘর সাজানোর এসব পণ্য অনেকে নিজের হাতেই তৈরী করে অনলাইনে  কিংবা  অফলাইনে নিজেরাই বিক্রী করছেন। এসব পণ্য যারা তৈরী করছেন তাদের কাছ থেকে সরাসরি যদি কিনতে পারেন তাহলে বাজার থেকে কেনার চেয়ে আপনার খরচ  অবশ্যই কম পড়বে। অনলাইনে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আপনার বাজারে যাওয়ার যাতায়াত খরচ এবং সময় দুই-ই সাশ্রয় হবে। 

 

মৃৎশিল্পের ব্যবহার

দেশীয় ঐতিহ্যকে আপনার বাড়িতে তুলে ধরতে ব্যবহার করুন মাটির তৈরী শোপিস। মাটির শোপিসগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। দেখতেও ভারী সুন্দর। মাটির তৈরী অনেক খেলনা, শোপিস, ছোট-বড় আকারের ফুলদানী, সরা ইত্যাদি হয়ে উঠতে পারে আপনার ঘর সাজানোর প্রধান অনুষঙ্গ। মাটির আসল রংটাই কিন্তু অনেক সুন্দর। যদি আপনি অন্য রংয়ে মাটির শোপিসগুলোকে রাঙ্গাতে চান, তা-ও করা সম্ভব। বারো মাসে তেরো পার্বনের বাংলাদেশে কোনো না কোনো উপলক্ষ্যে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। সেইসব মেলায় মাঝেমাঝেই অংশ নেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৃৎশিল্পীরা। তাদের কাছ থেকে কেনা খুবই সুন্দর কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যের শোপিসগুলো হয়ে উঠতে পারে আপনার বাড়িতে আগত অতিথিদের আকর্ষণের অন্যতম বিষয়।  

 

সাশ্রয়ী আসবাবপত্র

আসবাবপত্র দামি হবার চেয়ে সুন্দর এবং টেকসই হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। খরচ বাঁচাতে কাঠের বদলে বোর্ডের আসবাব ব্যবহারের প্রচলন আমাদের দেশে অনেকদিন ধরেই চলছে। খাটের ক্ষেত্রে দামি কাঠের পরিবর্তে রট আয়রন কিংবা বোর্ডের খাট কিনলে বেশকিছু টাকা সাশ্রয় হবে। ড্রইংরুমের সোফার ক্ষেত্রেও বেতের সোফা ও সেন্টার টেবিল শুধু সাশ্রয়ী নয়, দেখতেও সুন্দর লাগে। 

 

বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করুন

বাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আলো শুধু একটি প্রয়োজনই নয়, আপনার বাড়িকে আকর্ষনীয় দেখাতে আলোর গুরুত্ব অপরিসীম। উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতিতে একটি অতি সাধারণ ঘরেও সৃষ্টি হতে পারে অসাধারণ পরিবেশ। বাসায় আগত অতিথিরাও বাসার আলোকসজ্জার ব্যপারটি গুরুত্বের সাথে খেয়াল করেন। দিনের বেলায়  প্রাকৃতিক আলো যদি বাসায় যথেষ্ট পরিমাণে প্রবেশ করার সুযোগ থাকে তাহলে খুবই ভাল। জানালার পর্দাগুলোকে যথাসম্ভব সরিয়ে রেখে পর্যাপ্ত পরিমাণ  আলো প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। এটি বাড়ির সবার সুস্থতার জন্যও জরূরী। তবে রাজধানীর ইট-কাঠের নির্জীব পরিবেশে আলো-বাতাসে ভরপুর খোলামেলা বাসা আর ক'জনের ভাগ্যে জোটে? বাধ্য হয়েই তাই রাতে তো বটেই, দিনের বেলায়ও কৃত্রিম আলো ব্যবহার করতে হয়। ঘরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ওয়াল লাইট, সিলিং লাইটের পাশাপাশি ল্যাম্প শেড, স্ট্রিং লাইট ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। তবে এক্ষেত্রে একটা টেনশন সবার মাথাতেই আসে। জ্বি, ইলেক্ট্রিসিটির বিল। কম খরচে ঘরে উজ্জ্বল  আলোর ব্যবস্থা করতে বেছে নিতে পারেন এলইডি বাল্ব। সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ব্যাটারিচালিত স্ট্রিং লাইট, ইলেকট্রনিক ক্যান্ডেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

 

যোগ করুন সবুজের ছোঁয়া

বাসার বারান্দায় গাছগাছালি থাকলে শুধু দেখতেই সুন্দর লাগে না, গাছগুলো পরিবেশকে কিছুটা হলেও শীতল রাখে। তাই কম খরচে বারান্দা সাজাতে  সেখানে কিছু গাছ রাখুন। শুধু বারান্দা নয়, ঘর সাজাতে ঘরের ভিতরেও রাখতে পারেন বিভিন্ন ইনডোর প্ল্যান্ট। যান্ত্রিক জীবনে এভাবেই যোগ করতে পারেন প্রকৃতির ছোঁয়া। এক্ষেত্রে অবশ্যই গাছগুলোর মধ্যে যেগুলোর জন্য পানি প্রয়োজন সেগুলোতে নিয়মিত পানি এবং প্রয়োজনে সার, কীটনাশক ইত্যাদি দিতে হবে। বাসার এখানে-ওখানে নির্জীব কিছু গাছ পড়ে আছে, এই দৃশ্য মোটেও সুখকর হবে না।

 

 রং নির্বাচন করুন বুঝেশুনে

ঘর বড় এবং ছিমছাম দেখানোর ক্ষেত্রে রংয়ের বিশেষ ভূমিকা আছে। দেয়ালের রং থেকে পর্দা, বিছানার চাদর ইত্যাদির রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। দেয়ালের রং হালকা হলে ঘর বড় দেখায়। তাই ঘরের আকার ছোট হলে দেয়াল রাঙাতে হালকা রং ব্যবহার করা ভাল।   ভাড়া বাড়ির ক্ষেত্রে দেয়ালের রং নিজেরা পছন্দ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু সেক্ষেত্রেও পর্দা, চাদর ইত্যাদির রং একটু বুদ্ধি করে নির্বাচন করার সুযোগ আছে। যেমনঃ বিছানার চাদর পুরোপুরি সাদা কিংবা সাদার উপরে হালকা একটু ডিজাইন থাকলে ঘরটা দেখতে বড় লাগে। বিছানার চাদরের সাথে মিলিয়ে জানালার পর্দাও যদি সাদা হয় তাহলে ঘরটা বেশ খোলামেলা, ছিমছাম লাগে। তবে একথা সবারই জানা যে সাদা কাপড় অনেক দ্রুত ময়লা হয়। কাজেই, আপনার পক্ষে যদি ঘন ঘন পর্দা, চাদর ইত্যাদি ধোয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয় তাহলে সাদা এড়িয়ে চলাই ভাল। গাঢ় রংয়ের  চাদর ও পর্দা যে ব্যবহার করা যাবে না তা নয়। ঘর সাজাতে গাঢ় রংয়ের ব্যবহারেও ফুটে ওঠে বেশ জমকালো ভাব। ঘরটা যদি আকারে বড় হয় তাহলে নির্দ্বিধায় গাঢ় রং বেছে নিতে পারেন। তবে রং হালকা, গাঢ় যা-ই হোক না কেন পর্দা আর চাদরের রং এবং নকশায় মিল থাকলে বেশ ভাল লাগে।

 

আসবাবপত্র সাজানোর ক্ষেত্রে কৌশল অবলম্বন করুন

আসবাবপত্রগুলো কোনটা, কোথায়, কিভাবে রাখা হচ্ছে তার উপরে ঘরের সৌন্দর্য্য অনেকটাই নির্ভর করে। শুধু দামি, আধুনিক আসবাব থাকলেই ঘর ভালোভাবে সাজানো যাবে, না থাকলে যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। আসবাবপত্রের অবস্থান দক্ষতার সাথে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, খেয়াল রাখা প্রয়োজন, কোনো ঘরকে যেন বেশি আসবাবপত্র থাকার কারনে ফার্নিচারের দোকান বলে মনে না হয়। শুধু দামি আসবাবপত্রই আকর্ষণীয় নয়।  ছিমছাম, সুন্দর ডিজাইনের আসবাব  সবার কাছেই আকর্ষণীয়। পুরো ঘর ফার্নিচার দিয়ে যেন ঠাসা না থাকে। ঘরের ভেতর বাধাহীণভাবে চলাচল করার মতো যথেষ্ট জায়গা থাকতে হবে। 

শোবার ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে বিছানার আকার ও অবস্থান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। বিছানার প্রতি পাশে অন্তঃত দুই ফিট জায়গা খালি রাখা প্রয়োজন। এতে বিছানা গোছাতে সুবিধা হয়। বিছানা রাখতে হবে দরজার অন্তঃত ৩ ফিট দূরে। ঘরের জানালা ঘেঁষে বিছানা বা অন্যকোনো আসবাবপত্র রাখা অনুচিত। এতে ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। 

বিছানা যদি ঘরের তুলনায় একটু বড় হয়, তাহলে ঘরে খোলা জায়গা বের করা একটু কঠিন। তবে অন্য আসবাবগুলো বুদ্ধি করে নির্বাচন করতে পারলে ঘরটাকে সুন্দর দেখাবে। এক্ষেত্রে অন্য ফার্নিচারগুলোর  হতে হবে তুলনামূলকভাবে কম চওড়া। 

ডাইনিং রুমের ক্ষেত্রে, ডাইনিং টেবিলের অবস্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। টেবিলটা এমনভাবে রাখতে হবে যেন, প্রতি পাশের দেয়াল থেকে টেবিলের মধ্যে অন্তঃত ৩৬ ইঞ্চি দূরত্ব থাকে। এতে  সবার জন্যই চেয়ারগুলো ভালোভাবে টেনে আরামে বসা সম্ভব হবে। 

ড্রইংরুমের ক্ষেত্রে দামি জিনিসপত্রের চেয়ে একটি আন্তরিক পরিবেশ থাকা বেশি জরুরী। সোফাগুলো এমনভাবে রাখতে হবে যেন ওই রুমে বসে থাকা প্রতিটি মানুষ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে গল্পগুজব করতে পারে। 

 

পরিবারের সবার মতামত নিন

কোনো জরূরী ফার্নিচার হোক আর ডেকোরেশন পিস হোক, ঘর সাজানোর জন্য কিছু কেনার সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের মত নেবার চেষ্টা করবেন। ভাল হয় যদি একসাথে দুই-তিন জন গিয়ে জিনিসগুলো কেনা যায়৷ আপনি হয়তো দরদাম করে জিনিসপত্র কিনতে তেমন অভিজ্ঞ নন। সেক্ষেত্রে সাথে অভিজ্ঞ আরেকজন থাকলে কম খরচে কেনাকাটায় সুবিধা হবে। আপনি হয়তবা আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে একটা জিনিস পছন্দ করছেন, আরেকজন হয়তবা একটু ভিন্নভাবেই চিন্তা করবে। সবাই মিলে ঘরের জন্য পারফেক্ট সবকিছু বেছে নেবার চেষ্টা করুন।

 

শেষের কথা

ঘর সাজানো মানেই এক্সক্লুসিভ  ফার্নিচার নয়, অনেক বেশি জিনিসপত্র নয়। ঘর সাজাতে দরকার একটু সময় আর পরিকল্পনা। নিজের সাধ্যের মধ্যেই একটু বুদ্ধি করে জিনিসপত্র কিনলে, পরিপাটিভাবে সবকিছু গুছিয়ে রাখলে ঘর সুন্দরভাবে সাজানো যায়৷ সাজানো ঘর দেখতে কার না ভাল লাগে? ঘরের ভেতর সুখ-শান্তি বজায় রাখতেই তো সারাদিন বাইরে আমাদের কম পরিশ্রম, কতই না চেষ্টা! নিজের বাসা, নিজের ঘর সাধ্যমতো সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখুন। এতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য, কাজের উদ্যোম সবকিছুতেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

Read more