নতুন বাসা সাজানোর ১০টি টিপস
নতুন বাসায় যাওয়া সবসময়ই একটি উত্তেজনা আর চ্যালেঞ্জের বিষয়। সাথে আছে নতুন সম্ভাবনা। বাসা শিফটের মতো জটিল প্রক্রিয়া যেখানে অনেক ধরনের কাজ থাকে, সেটি শেষ করার পর আবার আসে নতুন কাজ। নতুন বাসা গোছানো, আনপ্যাক করা ইত্যাদি অনেক সময় নতুন চিন্তার জন্ম দেয়। তবে ব্যাপারটা একটু ভিন্নভাবেও দেখতে পারেন।
ধরে নিন, এই নতুন বাসা এমন একটি স্থান তৈরি করার সুযোগ যা সত্যিই আপনার ব্যক্তিত্ব এবং স্টাইলকে প্রতিফলিত করবে। একটি নতুন বাড়ি সাজানোর প্রক্রিয়াটি কঠিন মনে হতেই পারে। আগে কোন কাজ করবেন? কোনটা কীভাবে আনপ্যাক করবেন? কীভাবে সুন্দর একটি জায়গা তৈরি করবেন? এমন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।
তবে ভয় নেই! আজকের এই লেখাটিতে আমরা, আপনার নতুন বাড়িকে আপনার পছন্দের বাড়িতে রূপান্তরিত করার সব ধাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
১। ঘর পরিষ্কার করুন এবং বক্সগুলো এক জায়গায় রাখুন
বাসা শিফটের সময়, জলদি নতুন বাড়িতে সবকিছু আনপ্যাক করতে ইচ্ছা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সবার আগে আপনার নতুন বাড়িটিকে পরিষ্কার করার এটাই উপযুক্ত সুযোগ। আর যদি প্রতিকূল পরিবেশে বাসা বদল করেন, তবে ঘর পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়।
সব কিছু একবারে আনপ্যাক করলে পুরো বাসা বিশৃঙ্খল এবং ক্লাস্ট্রোফোবিক মনে হতে পারে। বিশেষ করে যদি এমন কিছু কাজ থাকে যা আপনার ঘর গোছানোর আগে করা দরকার। আপনাকে কী আনপ্যাক করতে হবে সেটা ঠিক করুন এবং যদি পারেন তবে সবকিছু একটি নির্দিষ্ট রুমে রাখুন। এতে পুরো ঘর এলোমেলোও হবে না, আবার আপনি নিজের মতো একটি একটি করে ঘর গুছাতেও পারবেন।
একটি নতুন এবং পরিচ্ছন্ন বাড়ি আপনাকে যেকোনো স্থানের সমস্যা বের করতে সাহায্য করবে। যা হয়তো অল্প কোনো ডিজাইন বা নিজের হাতের কাজের মাধ্যমে ঠিক করা যায়। চাইলে বন্ধু এবং পরিবারের মধ্যে কাজ ভাগ করে দিন। আপনার কাজ সহজ ও আনন্দদায়ক হবে।
২। স্টাইল বাছাই
ঘর সাজানো শুরুর আগে, আপনার ব্যক্তিগত স্টাইল নির্ধারণ করা জরুরি। আপনি কি আধুনিক মিনিমালিস্ট ডিজাইন পছন্দ করেন, না কি বোহেমিয়ান স্টাইল? আপনার স্টাইল ঠিক করা আপনাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিজাইন পছন্দ করতে সাহায্য করবে। তবে একটি নির্দিষ্ট স্টাইলেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে এমন নয়। সময়ের নিয়ে ধীরে ধীরে আপনার বাসা সাজিয়ে তুলুন।
রিসার্চ করুন: অনুপ্রেরণার জন্য ইন্টেরিয়র ডিজাইন ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো দেখুন। বিভিন্ন ডিজাইন, স্টাইল সম্পর্কে জানুন।
একটি মুড বোর্ড তৈরি করুন: আপনার স্টাইলের সাথে যায় এমন রুম, রং এবং আসবাবপত্রের ছবি দিয়ে মুড বোর্ড তৈরি করুন।
আপনার লাইফস্টাইল বিবেচনা করুন: আপনি এবং আপনার পরিবার কীভাবে বাসার বিভিন্ন স্থান ব্যবহার করেন সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। আপনার স্টাইল আপনার দৈনন্দিন রুটিনের পরিপূরক হওয়া উচিত।
৩। একটি ফ্লোর প্ল্যান তৈরি করুন
একটি সুচিন্তিত ফ্লোর প্ল্যান, বাসার প্রতিটি স্থান সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহারের জন্য এবং সুন্দর করে বাসা গোছানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার ঘর পরিমাপ করুন: সঠিকভাবে প্রতিটি ঘরের মাত্রা পরিমাপ করুন।
একটি স্কেল ডায়াগ্রাম আঁকুন: দরজা, জানালা এবং সকল আসবাবপত্রসহ প্রতিটি ঘরের একটি সাধারণ স্কেচ তৈরি করুন।
আসবাবপত্র রাখার স্থান ঠিক করুন: আসবাবপত্র চারদিকে ছড়িয়ে রাখার আগে, ঠিক করুন কোথায় কী রাখবেন। এবং এতে রুমগুলো দেখতে কেমন হবে, তাও ভেবে নিন।
ঘরে চলাফেরার জন্য জায়গা রাখুন: বাড়িতে লোকদের আরামে চলাফেরা করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নিশ্চিত করুন।
৪। কালার প্যালেট বাছাই করুন
রং একটি ঘরের পরিবেশে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে। তাই একটি উপযুক্ত কালার প্যালেট বাছাই করা, একটি চমৎকার বাসার জন্য অপরিহার্য।
নিরপেক্ষ রং দিয়ে শুরু করুন: দেয়াল, মেঝে এবং বড় আসবাবপত্রের জন্য নিরপেক্ষ রং বেছে নিন।
অ্যাকসেন্ট রং যোগ করুন: আনুষঙ্গিক, আর্টওয়ার্ক এবং টেক্সটাইলের মাধ্যমে গাঢ় রং অন্তর্ভুক্ত করুন।
রুমের কার্যকারিতা বিবেচনা করুন: বেডরুমে শান্ত রং এবং অন্যান্য স্থানের জন্য ভিন্ন রং বেছে নিন।
রং পরীক্ষা করুন: বিভিন্ন আলোতে এবং সময়ে কোন রং কেমন দেখায় তা দেখতে দেয়ালে রঙের নমুনা নিন।
৫। কার্যকারিতাকে অগ্রাধিকার দিন
যদিও নান্দনিকতা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু একটি বাড়ি কার্যকরীও হওয়া উচিত।
শোবার ঘর এবং লিভিং রুম: শোবার ঘর এবং লিভিং রুম আগে ঠিক করুন, যাতে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা থাকে।
প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বাছাই করুন: দরকারি এবং ব্যবহার উপযোগী আসবাবপত্র কিনবেন। চাইলে পুরানো আসবাবপত্রও কিনতে পারেন অথবা নতুন করে ব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করুন। কিছুদিন বসবাসের আগেই নতুন বাসার জন্য বড় কোনো আসবাবপত্র কিনবেন না।
পর্যাপ্ত স্টোরেজ রাখুন: আপনার বাড়িকে গুছিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত স্টোরেজ এবং এর বিকল্প অপশন যোগ করুন।
৬। টেক্সটাইল
টেক্সটাইল একটি স্থানে উষ্ণতা, টেক্সচার এবং ব্যক্তিত্ব যোগ করে।
পর্দা: ঘরের স্টাইলের সাথে যায় এবং নিরাপত্তা প্রদান করে এমন পর্দা বেছে নিন।
কার্পেট অথবা পাটি: পাতলা পাটি, কার্পেট যোগ করুন। এতে একটি ঘরের মধ্যে বিভিন্ন স্থান তৈরি হবে। কোনো দাগ থাকলে তা ঢেকে যাবে।
বালিশ এবং কম্বল: রং, প্যাটার্ন এবং আরামের পরিচয় দিতে বালিশ, হাল্কা কম্বল যোগ করুন।
গৃহসজ্জার সামগ্রী: গৃহসজ্জার সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করুন।
৭। আনুষঙ্গিক কাজ
আনুষঙ্গিক কাজ হলো ফিনিশিং টাচ যা একটি ঘরকে বাড়ির মতো তৈরি করে।
আর্টওয়ার্ক: আর্টওয়ার্ক যোগ করুন যা আপনার পছন্দ এবং ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে।
আয়না: স্থানের বিভ্রম তৈরি করে এবং গ্ল্যামারের স্পর্শ যোগ করে।
গাছপালা: আপনার বাড়িতে জীবন এবং সতেজতা আনবে।
গ্যালারি ওয়াল: ফ্রেমযুক্ত আর্টওয়ার্ক, প্রিন্ট এবং ছবির একটি গ্যালারি তৈরি করে ফাঁকা দেয়ালে ব্যক্তিত্ব জাগিয়ে তুলুন। এটি আপনার বাড়িতে একটি ব্যক্তিগত স্পর্শ যোগ করে আর স্মৃতির সংরক্ষণও বটে।
৮। আলো
পরিবেশ এবং কার্যকারিতা তৈরির জন্য সঠিক আলো অপরিহার্য।
পরিবেষ্টিত আলো: সাধারণ আলোকসজ্জার জন্য ওভারহেড ফিক্সচার ব্যবহার করুন।
টাস্ক লাইটিং: পড়া বা রান্নার মতো নির্দিষ্ট কাজের জন্য ফোকাসড আলো যুক্ত করুন।
অ্যাকসেন্ট আলো: ফোকাল পয়েন্ট হাইলাইট করতে এবং একটু ড্রামাটিক ভাব আনতে ব্যবহার করুন।
ডিম লাইট: বিভিন্ন মেজাজ অনুসারে আলোর নমনীয়তা তৈরি করুন।
৯। কম খরচে সমস্যা সমাধান করুন
অযথা বেশি খরচ করে কোনো সমস্যার সমাধানে যাবেন না। যেমন, যদি আপনার রান্নাঘরের ক্যাবিনেট খসখসে হয়, সেগুলো রং দিয়ে নতুন করে ফেলুন এবং হার্ডওয়্যারটি পরিবর্তন করুন। অযথা খুব দামি এবং সস্তায় গড়া কাঠের কাজের ক্যাবিনেট হার্ডওয়্যার ইনস্টল করবেন না।
বাথরুমে, আলোর ব্যবহার খুব সহজেই এর চেহারা পরিবর্তন করতে পারে। আপনি যদি আপনার নতুন জায়গায় সাধারণ R-টাইপ বাতি খুঁজে পান, তাহলে সেগুলো কম ‘হলুদ’ PAR-টাইপ বাল্ব দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন। চাইলে ডিমার সুইচ ইনস্টল করার মাধ্যমে আলোর মাত্রা কম রাখতে পারবেন, যা আপনার অর্থ বাঁচাবে।
১০। এক্সপার্ট অ্যাডভাইস
সম্ভব হলে এক্সপার্টদের উপদেশ নিতে পারেন। প্রচুর হোম ডেকোর ব্লগার এবং ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল রয়েছে। এর মধ্যে কোনটি আপনার স্টাইলের সাথে মেলে, কোনটি বাজেট-বান্ধব ইত্যাদি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বাড়ির সাজসজ্জা সবসময় পরিবর্তিত হয়। এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। আপনার প্রথম বাসা সাজানোর কাজ অনেক কঠিন মনে হওয়ার সাথে, মজারও মনে হতে পারে। তাই একে উপভোগ করুন, নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করুন। সবকিছু নিয়ম মেনে করতে হবে এমন নয়। আশা করি, আমাদের টিপস আপনাদের এই যাত্রা সহজ ও সুন্দর করবে।