বাচ্চাদের ঘর সাজানোর ১০টি টিপস

featured image

ঘর সাজানো এমনিতেই কঠিন একটি কাজ। বাচ্চাদের ঘর সাজানো আরও চ্যালেঞ্জিং। কারণ এটি একইসাথে বাচ্চার বিশ্রামের জায়গা, পড়াশুনার জায়গা আবার কিছু ক্ষেত্রে খেলার জায়গা। তাছাড়া বর্তমানে বাইরে খেলার সে পরিবেশ আর সুযোগ নেই। স্কুলের পর একটা লম্বা সময় বাচ্চারা বাসায়, নিজের রুমেই কাটায়। স্কুলে ভর্তির আগে তো তার পুরো জীবনই নিজের রুম কেন্দ্রিক। ঘরের কাজ, বাইরের কাজের চাপে বাবা-মা সবসময় পাশে থাকতে পারে না। যান্ত্রিকতার মাঝে তারা হয়ে পড়ে অনেকটাই ঘরকুনো। এই সময় তাই শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব মা-বাবার উপর বেড়ে যাচ্ছে। 

ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে তাই বাচ্চার ঘর নিয়ে অবহেলা করা যাবে না। অন্যান্য ঘরের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে ঘর সাজানোর পরিকল্পনা করতে হবে। বড়দের সাথে বাচ্চাদের পছন্দ মিলবে না স্বাভাবিক। আবার তাদের চিন্তাভাবনা অনেক কল্পনাপ্রসূত। একইসাথে, বাসার মূল থিমের সাথেও মিল থাকাটা দরকার। আজকের আর্টিকেলে কীভাবে বাচ্চার ঘর সাজাবেন, ফার্নিচার কেমন হবে, কোন দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে-এই সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে।  

বাচ্চার পছন্দকে গুরুত্ব দিন

ঘর সাজানোর শুরু করার সময় সবার আগে বাচ্চার পছন্দকে প্রাধান্য দিন। বাচ্চা যদি অনেক ছোট হয় সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত অবশ্যই বাবা-মা নিবে। তবে, যখন বাচ্চা মত প্রকাশ করতে পারবে তখন তার পছন্দ জেনে নেওয়া ভালো। অবশ্যই, বাচ্চার পছন্দ সবসময় যৌক্তিক হয় না। বাবা-মার পক্ষে সম্ভব হয় না তার আইডিয়া নেওয়া। তখন, কিছুটা পরিবর্তন করে আইডিয়াগুলো বাস্তবায়ন করা যায়। 

উঁচু মানের জিনিস ব্যবহার করুন 

বাচ্চাদের ঘর সাজানোর অন্যতম সমস্যা হচ্ছে, সময়ের সাথে তাদের পছন্দ এবং চাহিদার অনেক পরিবর্তন হয়। তাই ট্রেন্ডি, বা প্রতিবার নতুন আসবাবপত্র, ঘর সাজানোর জিনিস কেনার পরিবর্তে, এমন কিছু বেছে নিন যা আপনার বাচ্চাদের বড় হওয়ার সাথে সাথে সবসময় স্টাইলে থাকবে। একইসাথে, সবচেয়ে ভালো মানের দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যাবে এমন কিছু বেছে নিন।

খোলা জায়গা রাখুন

বাচ্চারা ছোটাছুটি করতে পছন্দ করে। তাছাড়া, বাইরে খেলার তেমন সুযোগ এখন নেই অথবা সবার থাকে না। তাই বাচ্চাদের ঘরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস রাখবেন না। বাচ্চার দরকারি জিনিসগুলো যেন হাতের কাছে থাকে। একগাদা ফার্নিচার দিয়ে ঘর সাজাবেন না। কোথায় কোন জিনিস রাখবেন আগে থেকে রুমের আকার আর অবস্থান অনুযায়ী ঠিক করে নিন।   

ঘরের পরিবেশ

বাচ্চাদের ঘরের পরিবেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ঘরে যাতে আলোবাতাস আসে এবং পরিষ্কার থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। ঘর নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো প্রাধান্য দিতে হবে। ধুলাবালি আসে বা নির্মাণাধীন বিল্ডিং আছে পাশে, এমন রুম বাচ্চাদের না হওয়া ভালো। 

বাচ্চার পছন্দের কর্নার

প্রথমেই বলেছি, বাচ্চাদের পছন্দ বড়দের মতো হবে না। কিন্তু যেহেতু এটা তাদের রুম, তাদের পছন্দকে গুরুত্ব দিলে সে তার রুমে যেমন আনন্দ পাবে তেমনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খুশি থাকবে। কেউ ছবি আঁকতে ভালোবাসে, কেউ বই পড়তে আবার কেউ গেম খেলতে। বাচ্চার পছন্দ অনুযায়ী তার জন্য একটা কর্নার বা দেয়ালে পেইন্টিং-এর ব্যবস্থা করতে পারেন। অথবা কারো জন্য থাকতে পারে ছবি আঁকার ক্যানভাস, বই রাখার সেলফ বা চেয়ার ইত্যাদি।  

রং

রঙের সঠিক ব্যবহার একটি সাধারণ ঘরকে ভিন্ন করে তুলতে পারে। এটি যেমন ঘরকে প্রাণবন্ত করে আবার ছিমছামও দেখাতে পারে। বাচ্চাদের ঘরে উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য সবসময়ই বেশি থাকে। উজ্জ্বল রং মন ভালো রাখতেও সাহায্য করে। বাচ্চাকে তার পছন্দের রং বেছে নিতে দিন। যাতে তার ঘর সত্যিই নিজের মনের হয়।

 

প্রচলিত সাদা দেয়ালের জায়গায় অফ হোয়াইট, হলুদ, আকাশি, গোলাপির মতো উজ্জ্বল রং বেছে নিন। বাচ্চার পছন্দের কোনো চরিত্র বা গল্পের থিমও ব্যবহার করতে পারেন। পুরো বাসার থিমের সাথে একদম না মিললেও অন্তত একটি দেয়াল বা অংশের জন্য শিশুদের পছন্দের রং বেছে নিন। অথবা, ভিন্ন শেডের একই কালার প্যালেটের রং বেছে নিতে পারেন। 

আপনি চাইলে ৬০-৩০-১০ রঙের সূত্রটি ব্যবহার করুন:

* ৬০% ঘর একটি বেস কালারের হবে। এটি মেঝে, দেয়াল বা আসবাবের মতো বড় জায়গাগুলোতে ব্যবহৃত হবে।

*৩০% একটি পরিপূরক রং যা আপনি কার্পেট, পর্দা,বিছানার চাদর, ল্যাম্প এবং স্টোরেজে রাখতে পারেন।

*১০% ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে হতে পারে। এখানে আপনি, আপনার সন্তানের পছন্দসই রং অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন এবং এটি বালিশ, পেইন্টিং বা খেলনার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। 

ঘরের ফার্নিচারের সাথে মিল রাখার ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে পারেন। সাথে পর্দা, বিছানার চাদর, বালিশের কভার বা কুশনের রং ঘরের থিমের সাথে মিলিয়ে রাখতে ভুলবেন না। বাচ্চাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের পছন্দের পরিবর্তন হয়। তাই একটু লম্বা সময় ব্যবহার করা যাবে এমন রং ব্যবহার করবেন।  

আসবাবপত্র

বাচ্চাদের ঘরে সাধারণত খাট, পড়ার টেবিল, খেলনা রাখার বক্স বা স্টোরেজ, আলমারি বা ওয়ারড্রব, বুকশেলফ ইত্যাদি থাকে। এর বেশি কিছু রাখার প্রয়োজনও হয় না, উচিতও নয়। কারণ ঘরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা উচিত। কিন্তু, সবার পক্ষে তা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে, মাল্টিফাংশন ফার্নিচার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, ফোল্ডিং টেবিল বা ওয়াল মাউন্টেড বেড ব্যবহার করতে পারেন। এতে জায়গাও বাঁচবে, ব্যবহার সহজ হবে। 

বাচ্চাদের রুমের জন্য বাংক বেড অনেক সুবিধার। শিশুদের যেমন পছন্দের, তেমনি মেঝেতে জায়গা খালিও থাকবে। একটি আরামদায়ক বিছানা বেছে নিবেন। বাচ্চাদের ঘুমের প্রয়োজন বেশি। তাই ভালো এবং নরম ম্যাট্রেস বা তোশক ব্যবহার করুন। বাচ্চার উচ্চতা অনুযায়ী আসবাবপত্র কিনবেন, যাতে বাচ্চারা ব্যথা না পায়। তাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতের কাছে রাখুন। 

বাচ্চাদের রুমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো স্টাডি কর্নার। পড়ার টেবিলের পাশাপাশি একটি শেলফে পড়ার বই, গল্পের বই রাখতে পারেন; সাথে একটি আরামদায়ক চেয়ার। বুকশেলফ রাখতে না চাইলে ওয়াল শেলফ বা দেয়ালে কয়েকটি তাক লাগাতে পারেন। অনেক পড়ার টেবিলের সাথে বুকশেলফ থাকে। জানালার পাশে টেবিল রাখার চেষ্টা করুন। রাতে যেন টেবিলে ঠিকঠাক আলো পড়ে তা খেয়াল রাখুন। সাথে কিছু ছোট গাছ রাখতে পারেন। 

সাজসজ্জা

বাচ্চাদের ঘর বাচ্চাদের মতো, তাদের পছন্দ অনুযায়ী সাজান। রঙিন কাগজের তৈরি বিভিন্ন খেলনা, তাদের নিজেদের আঁকা ছবি, ফেয়ারি লাইট, রঙিন ওয়াল পেপার, লাইট ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। মেঝেতে হালকা কার্পেট বা রাগ বিছাতে পারেন। তাহলে বাচ্চারা ব্যথা পাবে না। তবে, খেয়াল রাখবেন আপনার পরিষ্কার করতে যাতে সহজ হয়। একটি ওয়াল হুকে ব্যাগ, কোট ইত্যাদি ঝুলিতে রাখতে পারেন।

নিরাপত্তা 

দুর্ঘটনা এড়াতে দেয়াল থেকে আসবাবপত্র একটু দূরে রাখুন। সাথে আসবাবপত্র যাতে ঠিক মতো বসানো থাকে তা নিশ্চিত করুন। আউটলেট কভার এবং বৈদ্যুতিক কর্ড সাবধানে রাখবেন। চাইলে আসবাবপত্রের কোণা বেবি প্রুফ করে নিতে পারেন। কাঁচ এবং লোহার ভারি জিনিস রাখা বিরত থাকুন। খেলনা রাখার জন্য বড় ঝুঁড়ি ব্যবহার করুন।

বাচ্চাদের নিজের রুম পরিষ্কার করা, কাজ শেষে জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা শেখান। প্রথমে নিজে কাজ করার সময় তাকে কাছে রাখুন। ধীরে ধীরে নিজেই কাজ করা শিখে যাবে। এভাবে সে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। নিজের ঘর, জায়গা ঠিক রাখা, জিনিসপত্রের যত্ন নেওয়া শিখবে। এতে তার মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ভালোভাবে ঘটবে।

তাই তার পছন্দকে গুরুত্ব দিন। সে অনুযায়ী ঘর সাজান। তাহলে পুরো প্রক্রিয়ায় শিশু নিজেকে যুক্ত করতে পারবে। আশা করি, বাচ্চাদের ঘর সাজানোর এইসব টিপস আপনাকে সাহায্য করবে। 

Read more